জৌনপুর, ১৮ ডিসেম্বর: পারিবারিক বিবাদ ও আন্তধর্মীয় বিয়েকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডে চাঞ্চল্য উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরে। নিখোঁজ এক বৃদ্ধ দম্পতির পাঁচ দিনের খোঁজাখুঁজির পর পুলিশ জানতে পারে, তাঁদের নিজের ছেলেই নৃশংসভাবে বাবা–মাকে খুন করেছে। এরপর করাত দিয়ে দেহ টুকরো করে সিমেন্টের বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেয় অভিযুক্ত।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের নাম অম্বেশ। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তে জানা গেছে, কোভিড মহামারির সময় কলকাতায় এক মুসলিম মহিলাকে বিয়ে করেন অম্বেশ। তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের আহমেদপুর গ্রামের বাসিন্দা অম্বেশের পরিবার এই আন্তধর্মীয় বিয়ে মেনে নিতে পারেনি এবং তাঁকে স্ত্রী থেকে আলাদা হওয়ার জন্য চাপ দেয়।
এই পরিস্থিতির মধ্যে অম্বেশের স্ত্রী ভরণপোষণের দাবি তোলেন। ফলে অর্থের জন্য বাবা–মায়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন অম্বেশ। টাকা ও জমিজমা নিয়ে পরিবারের মধ্যে প্রায়ই অশান্তি চলতে থাকে।
প্রায় তিন মাস আগে কলকাতা থেকে ফিরে বাবা–মায়ের সঙ্গেই থাকতে শুরু করেন অম্বেশ। কিন্তু তাতেও ঝামেলা থামেনি। পুলিশের দাবি, ধীরে ধীরে তার মধ্যে তীব্র ক্ষোভ জমতে থাকে।
গত ৮ ডিসেম্বর তীব্র বচসার পর অম্বেশ লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে নিজের মা বাবিতা (৬৩)-কে হত্যা করে। বাবা শ্যাম বাহাদুর (৬৫) চিৎকার করতে গেলে তাঁকেও মারধর করে দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খুনের পর বাড়ির বেসমেন্টে রাখা নির্মাণকাজের করাত দিয়ে বাবা ও মায়ের দেহ তিন টুকরো করে অম্বেশ। এরপর ছ’টি সিমেন্টের বস্তায় দেহাংশ ভরে ফেলে এবং বাবা–মায়ের পোশাক দিয়ে রক্তের দাগ পরিষ্কার করে।
পরে নিজের গাড়িতে করে বস্তাগুলি নিয়ে গিয়ে বেশিরভাগ দেহাংশ গোমতী নদীতে ফেলে দেয় সে। মায়ের একটি দেহাংশ বস্তায় না ধরায় বারাণসীর দিকে যাওয়ার পথে সাই নদীতে সেটি ছুড়ে ফেলা হয়।
নিহত দম্পতির মেয়ে বন্দনা দীর্ঘদিন বাবা–মা ও ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ১৩ ডিসেম্বর নিখোঁজ ডায়েরি করেন। ১৫ ডিসেম্বর পুলিশ অম্বেশের খোঁজ পায়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সে বারবার বয়ান বদলাতে থাকে। তবে টানা জেরায় শেষ পর্যন্ত সে অপরাধের কথা স্বীকার করে।
জ্যেষ্ঠ পুলিশ আধিকারিক আয়ুষ শ্রীবাস্তব অভিযুক্তকে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করান। এখনও পর্যন্ত ডুবুরিরা একটি দেহাংশ উদ্ধার করেছে। বাকি দেহাংশ উদ্ধারের জন্য তল্লাশি অভিযান চলছে। পুলিশ খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত চালাচ্ছে।

