কলকাতা, ১৬ ডিসেম্বর :
ভোটের মুখে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক ঝড় তুলতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (এসআইআর)। রাজ্যের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর জানা গিয়েছে, মোট ৫৮ লক্ষ নাম বাদ পড়েছে তালিকা থেকে। এই বাদ যাওয়া নামগুলির মধ্যে ২৪ লক্ষকে ‘মৃত’, ১৯ লক্ষকে ‘স্থানান্তরিত’, ১২ লক্ষকে ‘নিখোঁজ’ এবং প্রায় ১.৩ লক্ষ নামকে ‘ডুপ্লিকেট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
খসড়া তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে এসআইআর-এর প্রথম পর্বের কাজ শেষ হয়েছে। যাঁদের নাম ভুলবশত বাদ পড়েছে, তাঁরা এখন আপত্তি জানিয়ে সংশোধনের আবেদন করতে পারবেন। সমস্ত আপত্তি নিষ্পত্তির পর আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। তার পরেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এর আগে ২০০২ সালে শেষবার রাজ্যে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন হয়েছিল।
এই বিপুল সংখ্যক নাম বাদ পড়াকে “চরম অবিচার” বলে দাবি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, “এটা বিজেপির ষড়যন্ত্র। বাংলার বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা ভোটার সহায়তা শিবির খুলেছি। যাঁদের নাম বাদ পড়েছে, তাঁদের ফর্ম জমা দিয়ে আবার তালিকাভুক্ত হতে আমরা সাহায্য করব।” সংসদ ভবনে এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন।
খসড়া তালিকা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যে এসআইআর ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর আরও তীব্র হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু থেকেই এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে আসছেন। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্র সরকার ও নির্বাচন কমিশন ভোটের আগে লক্ষ লক্ষ যোগ্য ভোটারের নাম কাটছাঁট করতেই এসআইআর ব্যবহার করছে।
চলতি মাসের শুরুতে নদিয়ার কৃষ্ণনগরে এক জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভোটার তালিকা থেকে নাম কাটা হলে মানুষকে রাস্তায় নামতে হবে। তিনি বলেন, “এসআইআর-এর নামে কি মায়েদের-বোনেদের অধিকার কেড়ে নেবে? দিল্লি থেকে পুলিশ এনে ভোটের সময় ভয় দেখাবে। মা-বোনেরা, যদি তোমাদের নাম কাটা যায়, তোমাদের হাতে তো অস্ত্র আছে—রান্নাঘরের অস্ত্র। শক্তি আছে তো? নাম কাটলে ছেড়ে দেবে না, তাই তো? সামনে লড়বে মেয়েরা, আর তাদের পিছনে থাকবে পুরুষরা।”
অন্যদিকে বিজেপির দাবি, এসআইআর নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির আসল কারণ তাঁর ভোটব্যাঙ্ক রক্ষা করা, যেখানে অবৈধ অভিবাসীরাও রয়েছে। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “মৃত, ভুয়ো এবং অবৈধ ভোটারদের নাম বাদ পড়ছে বলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আতঙ্কিত। তৃণমূল ও বিজেপির ভোটের ব্যবধান মাত্র ২২ লক্ষ। ক্ষমতা হারানোর ভয়েই তিনি হইচই করছেন।”
এর আগেও তৃণমূল কংগ্রেস নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছিল। বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) উপর অতিরিক্ত কাজের চাপের জেরে আত্মহত্যার অভিযোগ উঠলে তৃণমূল দাবি করেছিল, নির্বাচন কমিশনের “হাতে রক্ত লেগে আছে”। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন দলের তরফে নতুন করে আরও আক্রমণ শোনা যেতে পারে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা।

