নয়াদিল্লি, ১৫ ডিসেম্বর :
কংগ্রেসের ‘ভোট চুরি’ প্রচারের সঙ্গে ইন্ডিয়া বিরোধী জোটের কোনও সম্পর্ক নেই বলে স্পষ্ট জানালেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “কংগ্রেসের ‘ভোট চুরি’ কর্মসূচির সঙ্গে ইন্ডিয়া জোটের কোনও যোগ নেই। প্রতিটি দলের নিজস্ব কর্মসূচি বেছে নেওয়ার অধিকার রয়েছে। কংগ্রেস এসআইআর ও ভোট চুরিকে তাদের মূল ইস্যু করেছে। আমরা কে তাদের বলার যে কী করবে? ওরা ওদের ইস্যু বেছে নিক, আমরাও আমাদেরটা বেছে নেব।”
উল্লেখ্য, কংগ্রেস সম্প্রতি জাতীয় রাজধানীতে একটি বৃহৎ সমাবেশ করে ‘ভোট চুরি’ প্রচার জোরদার করেছে। প্রধান বিরোধী দলটির অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন বিজেপির সঙ্গে যোগসাজশ করে ভোট প্রক্রিয়ায় কারচুপি করছে। যদিও নির্বাচন কমিশন এবং বিজেপি এই অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে খারিজ করেছে।
ওমর আবদুল্লাহর এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এল, যখন এক সপ্তাহ আগেই তিনি বলেছিলেন যে ইন্ডিয়া জোট এখন “লাইফ সাপোর্টে” রয়েছে। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে জোটের শরিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়—কেউ তাঁর বক্তব্য সমর্থন করেন, আবার কেউ তীব্র আপত্তি তোলেন।
দিল্লিতে হিন্দুস্তান টাইমস লিডারশিপ সামিটে এক আলোচনায় ওমর বলেন, “আমরা একরকম লাইফ সাপোর্টে আছি। মাঝে মাঝে কেউ এসে প্যাডল দিয়ে আমাদের একটু শক দেয়, আমরা উঠে দাঁড়াই। কিন্তু তারপর বিহারের মতো ফলাফল এলে আবার আমরা ঢলে পড়ি, তখন আবার কাউকে আমাদের আইসিইউতে নিয়ে যেতে হয়।”
তিনি আরও বলেন, ইন্ডিয়া জোটের কিছু সিদ্ধান্তই নীতীশ কুমারকে ফের এনডিএ-র দিকে ঠেলে দিয়েছে। পাশাপাশি বিহারে আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে হেমন্ত সোরেনের নেতৃত্বাধীন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চাকে যথাযথভাবে জায়গা দিতে না পারাকেও জোটের ব্যর্থতা হিসেবে তুলে ধরেন।
এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আরজেডি নেতা মনোজ ঝা বলেন, ওমর আবদুল্লাহর বক্তব্য ছিল “তাড়াহুড়ো করে দেওয়া।” তিনি বলেন, “যদি জোট লাইফ সাপোর্টে থাকে, ওমর নিজেও তো এই জোটের অংশ। জোটকে পুনরুজ্জীবিত করতে তিনি কী করছেন? দায়িত্ব শুধু কটাক্ষ করে শেষ হয়ে যায় না।”
সিপিআই সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা জোটের সব দলকে আত্মসমালোচনার আহ্বান জানান। তাঁর প্রশ্ন, “ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দলগুলি বিজেপিকে হারাতে ও দেশকে বাঁচাতে ইন্ডিয়া জোট গড়েছিল। তাহলে এখন কী হচ্ছে? প্রত্যাশিত সমন্বয়ে জোট কেন কাজ করতে পারছে না?”
সমাজবাদী পার্টির সাংসদ রাজীব রাই ওমরের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন বলে জানান। তিনি বলেন, “পরাজয় মানুষকে কিছুটা বিচলিত করতে পারে, কিন্তু সেটাই বিজেপি চায়। যারা বিজেপি ও ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়ছে, তাদের এই ফাঁদে পা দেওয়া উচিত নয়। জয়-পরাজয় রাজনীতির অঙ্গ।”
অন্যদিকে, বিরোধী জোটের অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। দলের প্রবীণ নেতা শাহনওয়াজ হুসেন বলেন, “ওমর আবদুল্লাহ ভুল বলছেন। ইন্ডিয়া জোট লাইফ সাপোর্টে নয়, সেটি আগেই মারা গেছে। লোকসভা নির্বাচনের পরই এই জোটের অবসান হয়েছে। এর জন্য শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া উচিত। এই জোটের না আছে কোনও নেতা, না আছে কোনও নীতি।”

