ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কৃষকরা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন লাইটের কারণে চাষাবাদে ক্ষতির মুখে

কাঁঠালিয়া, ৬ ডিসেম্বর: ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারের ভারত ভূখণ্ডের কৃষকরা বর্তমানে এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন। সীমান্তের কাছে কাঁটাতারের লাগোয়া শত শত কৃষক, বিশেষ করে বর্গা চাষিরা, একেবারে হতাশ হয়ে পড়েছেন তাদের ফসলের ক্ষতির কারণে। প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ থেকে আসা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এলআইডি লাইট গুলির প্রভাবে তাদের ধান গাছগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই লাইটগুলির আলোতে ধান গাছগুলো শুকিয়ে, ছনের মতো হয়ে গেছে এবং ফলন একেবারে হয়নি।

তবে শুধু ধান গাছের ক্ষতি নয়, কাঁটাতার এবং এলআইডি লাইটের কারণে সীমান্ত এলাকায় নতুন সমস্যাও সৃষ্টি হয়েছে। ভারত ভূখণ্ডে কাঁটাতার থেকে মাত্র পাঁচ মিটার দূরে নতুন করে মাটি বিছিয়ে কাঁটাতার লাগানো হয়েছে। এর ফলে কৃষক এবং কৃষি শ্রমিকরা প্রায়শই মরশুমের কাজকর্ম করতে গিয়ে এই কাঁটাতারের আঘাতে আহত হচ্ছেন। অনেক সময় রক্তাক্তও হচ্ছেন তারা। এই ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটেছে একাধিক বার।

বিগত এক বছরের মধ্যে কাঠালিয়া ব্লকের সীমান্ত এলাকার অধিকাংশ কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই এলাকার গ্রামগুলোতে, যেমন উত্তর পাহাড়পুর থেকে দক্ষিণ ভবানীপুর পর্যন্ত, সীমান্তের কাছাকাছি এলআইডি লাইটগুলো স্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে কৃষি জমি প্রায় পতিত হয়ে পড়েছে।

কৃষকদের মতে, আগে কম পাওয়ারের লাইট থাকলেও ফসলের ক্ষতি হতো না। কিন্তু গত এক বছরে এলআইডি লাইটগুলি প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতায় খামপোস্টের সঙ্গে স্থাপন করা হয়েছে, এবং সেগুলি পুরো রাত জ্বালানো হয়। এর ফলে ফসলের উপর প্রচণ্ড প্রভাব পড়েছে।

শুক্রবার স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময়, একাধিক কৃষক তাদের ক্ষতির কথা জানান। নির্ভয়পুরের রহিম মিয়া, শৈলেন সরকার, হারাধন দে, নারায়ণ মজুমদারসহ অন্যান্য কৃষকরা বলেন, কৃষিকাজে অনেক টাকা খরচ করেছি, শারীরিক পরিশ্রমও করেছি, কিন্তু একমাত্র এই লাইটের কারণে আমাদের ফসলের কোনো ফলন হয়নি। আমাদের কে ক্ষতিপূরণ দেবে?

তারা আরো জানান, বিএসএফ-এর সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলার পর তারা জানিয়ে দিয়েছেন, এটা আমাদের কিছু করার বিষয় নয়। এছাড়া, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা, যেমন ব্লক পঞ্চায়েত সমিতি ও বিধায়কের কাছেও এই সমস্যার সমাধান চেয়েছেন। তবে তারা শুধু আশ্বাস দিয়েছেন যে, দেখা যাক, কিছু করা যায় কিনা।

তাদের দাবি, যদি এই সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে আগামী দিনে কাঁটাতারের এপারে ভারত ভূখণ্ডের কৃষি জমি একেবারে পতিত হয়ে যাবে। টাকা খরচ করে, শারীরিক পরিশ্রম করে কৃষিকাজ করি, কিন্তু যদি ফলন না হয়, তাহলে আমাদের জন্য তা কী লাভ?—এমন প্রশ্ন তুলছেন তারা।

এখন তারা সরকারের কাছে, বিশেষ করে মাননীয় কৃষি মন্ত্রীর কাছে এই সমস্যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন, যাতে দ্রুত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়।

Leave a Reply