আগরতলা, ৪ ডিসেম্বর: ঊনকোটি জেলার জেলাসদর কৈলাসহরে শিক্ষা ব্যবস্থার চরম অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষা দপ্তরের রাজ্যস্তরীয় উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের দীর্ঘদিনের উদাসীনতার ফলেই খোদ শহর এলাকায় একের পর এক সরকারি স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই শহরের কাজিরগাঁও এলাকায় অবস্থিত কৈলাসহর সিনিয়র বেসিক স্কুলটি ছাত্রছাত্রীর অভাবে বিগত এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এবার শহরের আরেকটি সরকারি স্কুল বিমল সিংহ কমপ্লেক্স জেবি স্কুল বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমশ জোরালো হয়ে উঠছে।
কাজিরগাঁও এলাকার সিনিয়র বেসিক স্কুলে দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমছিল। অবশেষে ছাত্রছাত্রী না থাকায় স্কুলটিকে নন-ফাংশনাল ঘোষণা করা হয়। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিকটবর্তী বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়ায় স্কুলটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
শহরের কেন্দ্রস্থল বিমল সিংহ কমপ্লেক্স এলাকায় অবস্থিত এই স্কুলে বর্তমানে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ছয়জন ছাত্রছাত্রী আছে। কিন্তু নিয়মিতভাবে উপস্থিত থাকেন মাত্র দু’-তিনজন। ৪ ডিসেম্বর দেখা যায়, মাত্র দুইজন ছাত্রছাত্রী উপস্থিত হয়ে জাতীয় সংগীত গেয়ে দিনের ক্লাস শুরু করেছে।
স্কুলে দুটি শিক্ষিকা রয়েছেন—স্বপ্না দে (ইনচার্জ) এবং প্রীতি সিনহা। স্কুলের ইনচার্জ স্বপ্না দে বলেন, প্রথম শ্রেণিতে একজন ছাত্র রয়েছে, দ্বিতীয় শ্রেণিতে কেউ নেই। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে দু’জন করে ছাত্রছাত্রী আছে, আর পঞ্চম শ্রেণিতে একজন। প্রতিদিন উপস্থিত কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে মিড-ডে মিল দেওয়া হয়। আগেকার দিনে এই স্কুলে ৬০-৭০ জন ছাত্রছাত্রী ছিল, কিন্তু আশেপাশে দুইটি সরকারি ও তিনটি বেসরকারি স্কুল থাকায় এখানে আর ভর্তি হচ্ছে না। অভিভাবকরা এখন বেশি করে ইংরেজি-মাধ্যম স্কুলে সন্তানের পড়াশোনা করাতে আগ্রহী।
তিনি আরও জানান, ২০১৬–১৭ সালে দপ্তর ও পুরপরিষদের পক্ষ থেকে বিদ্যালয়টি বন্ধ করে পাশের স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে সরকার পরিবর্তনের পর আর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। ফলে স্কুলটি খুব শীঘ্রই বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
কৈলাসহর বিদ্যালয় পরিদর্শক রাধন ত্রিপুরা বলেন, কাজিরগাঁও সিনিয়র বেসিক স্কুল ছাত্র না থাকায় নন-ফাংশনাল হয়ে আছে। বিমল সিংহ কমপ্লেক্স জেবি স্কুলেও ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা দ্রুত কমেছে। দপ্তরের পক্ষ থেকে মৌখিক নির্দেশ এসেছিল যে ছাত্রছাত্রীদের পাশের মডেল স্কুলে স্থানান্তর করতে হবে। কিন্তু লিখিত নির্দেশ না থাকায় আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছি না।
রাজ্য সরকার শিক্ষা পরিষেবার মানোন্নয়নে উদ্যোগী হলেও কৈলাসহর শহরে পরিস্থিতি ভিন্ন। একের পর এক সরকারি স্কুল কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে, তবুও স্থানীয় বিধায়ক বিরজিত সিনহা বা অন্যান্য জনপ্রতিনিধি—কারোরই কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ উঠছে। সমাজসেবীরাও এ বিষয়ে নীরব।
শহরবাসীর অভিমত, শিক্ষা দপ্তরের উদাসীনতা অব্যাহত থাকলে খুব শীঘ্রই কৈলাসহরে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়বে।

