বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক অস্থিরতা: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহে জড়িত থাকার অভিযোগ

ঢাকা, ১ ডিসেম্বর : ১৬ বছর আগে সংঘটিত বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) বিদ্রোহে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ডে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি জড়িত ছিলেন—এমন চাঞ্চল্যকর দাবি করেছে তদন্ত কমিশন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপি জানিয়েছে, কমিশনটি আরও অভিযোগ করেছে যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্রে ভারতও ভূমিকা রেখেছিল।

কমিশনের প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ রবিবার প্রকাশ করা হয়, যা ৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে। তিনি ইতোমধ্যে গত বছরের গণবিক্ষোভ দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অনুপস্থিত অবস্থায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন।

২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা থেকে শুরু হয়ে সারা দেশে বিস্তৃত হওয়া দুই দিনের বিদ্রোহে ৭৪ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ছিলেন বহু উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা। এই ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগে ক্ষমতায় ফেরেন শেখ হাসিনা।

ঘটনা পুনঃতদন্তের জন্য অর্থনীতিবিদ ও নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে কমিশনটি গঠিত হয়।কমিশনের দাবি অনুযায়ী, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার সরাসরি বিডিআর বিদ্রোহে জড়িত ছিল। কমিশনপ্রধান এএলএম ফজলুর রহমান জানান, সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপসকে “মূল সমন্বয়কারী” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাঁর দাবি, তাপস শেখ হাসিনার নির্দেশে কাজ করেছেন এবং হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য হাসিনা ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দিয়েছিলেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিদেশি শক্তির সংশ্লিষ্টতা তদন্তে স্পষ্ট হয়েছে এবং সে সময় ভারত অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, যখন সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে সেই প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করেছিল। রহমানের মতে, সেই সময় ৯২১ জন ভারতীয় বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিলেন, যাদের মধ্যে ৬৭ জনের কোনও খোঁজ নেই। ভারতের পক্ষ থেকে এখনও এই অভিযোগে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে গণবিক্ষোভের পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ায় দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

এই ঘটনার পর কমিশনের প্রতিবেদনে সত্য উদঘাটিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনুস। উল্লেখ্য, হাসিনার সরকারের পূর্ববর্তী তদন্তে বিদ্রোহের কারণ হিসেবে সেনাদের বেতন ও সুবিধা নিয়ে অসন্তোষকে দায়ী করা হয়েছিল, যদিও বিরোধীরা দাবি করেছিল যে সেনাবাহিনীর ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই বিদ্রোহকে ব্যবহার করেছিলেন শেখ হাসিনা। এদিকে, বাংলাদেশ সরকার রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে আশা প্রকাশ করেছে যে ভারত দ্রুত শেখ হাসিনাকে ফিরে পাঠাবে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন জানান, একটি বিষয় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে না, তবে তিনি এখন দণ্ডিত অভিযুক্ত হওয়ায় তাঁর দ্রুত প্রত্যর্পণ বাংলাদেশ আশা করছে।

পটভূমিতে জানা যায়, ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে অনুপস্থিত অবস্থায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং ২০২৪ সালের ‘জুলাই আপরাইজিং’-এর পর ৫ আগস্ট তিনি ক্ষমতা হারান। পরবর্তীতে তিনি ভারতে আশ্রয় নেন এবং বাংলাদেশি আদালত তাঁকে “পলাতক” ঘোষণা করে। সংবাদটি এখনও বিকাশমান, এবং বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা করা হচ্ছে।