‘বন্দেমাতরম’ নিয়ে ভ্রান্ত প্রচার— আরএসএস–বিজেপির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য স্পষ্ট : প্রদেশ কংগ্রেস

আগরতলা, ২৮ নভেম্বর: দেশে উগ্র ব্রাহ্মণ্যবাদী ও মনুবাদী দর্শনের ভিত্তিতে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকার এবং সংঘ পরিবারের পরিকল্পিত উদ্যোগের বিরুদ্ধে তীব্র সরব হল ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস। দলের অভিযোগ, দেশের “ধর্মগ্রন্থ” হিসেবে সংবিধানকে পাল্টে দেওয়ার গোপন প্রয়াস আড়াল করতে ইতিহাস বিকৃত করে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি চর্চা করছে বিজেপি নেতৃত্ব।

সম্প্রতি সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মের ১৫০ বছর উপলক্ষে সরকারি অর্থে ‘একতা যাত্রা’ পালন এবং বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বন্দেমাতরম’-এর ১৫০ বছর উপলক্ষে ডাকটিকিট প্রকাশের মঞ্চ ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে দেশে নতুন করে বিভাজনের বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ করেছে প্রদেশ কংগ্রেস।

প্রধানমন্ত্রী উক্ত অনুষ্ঠানে দাবি করেন, ১৯৩৭ সালে ‘বন্দেমাতরম’ গানের কয়েকটি পংক্তি বাদ দেওয়াই নাকি দেশভাগের বীজ বপন করেছিল। এই মন্তব্যকে “সম্পূর্ণ অসত্য ও ইতিহাসবিরোধী” বলে কর্ণার করে কংগ্রেস।

কংগ্রেস দাবি করেছে, ১৯২৫ সালে আরএসএস প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের চিন্তা তারা পোষণ করত, পরে মুসলিম লিগও সেই দাবিতে শামিল হয়। স্বাধীনতা আন্দোলনের বিভিন্ন বিপ্লবী সংগঠনের কাছে ‘বন্দেমাতরম’ ছিল সংগ্রামের মন্ত্র। ক্ষুদিরাম বসু, ভগৎ সিং, মাতঙ্গিনী হাজরা থেকে শুরু করে আসফাক উল্লা খান— সকলেই মৃত্যুর মুখে শেষবার উচ্চারণ করেছিলেন “বন্দেমাতরম”। অথচ আরএসএস তাদের কোনও শাখায় আজও এই গান পরিবেশন করে না, ইতিহাসেও এ বিষয়ে কোনও উল্লেখ নেই।

কংগ্রেস জানায়, ‘বন্দেমাতরম’ গানের কোন অংশটি সর্বজনগ্রাহ্য হবে, তা নির্ধারণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, সুভাষচন্দ্র বসু, মৌলানা আজাদ প্রমুখদের সমন্বয়ে একটি কমিটি কাজ করে। তাদের সুপারিশে গানের নির্দিষ্ট অংশ গণপরিষদে জাতীয় গানের মর্যাদা পায়।

এ প্রসঙ্গে ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিও সেই সময় গণপরিষদে সমর্থন জানিয়েছিলেন— এটাও স্মরণ করিয়ে দেয় কংগ্রেস।

প্রদেশ কংগ্রেসের বক্তব্য, সর্দার প্যাটেলের ১৫০ বছর উপলক্ষে ‘একতা যাত্রা’র আড়ালে আরএসএস–বিজেপি নিজেদের রাজনৈতিক অভিসন্ধি চাপা দিতে চাইছে। মহাত্মা গান্ধি হত্যা-ষড়যন্ত্রের দায়ে প্যাটেল নিজেই আরএসএসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন— এই তথ্য আজও ইতিহাসে স্পষ্ট।

“গান্ধী, নেহেরু, প্যাটেল, আম্বেদকর— জাতীয় ব্যক্তিত্বদের প্রতীক হিসেবে সামনে এনে প্রকৃতপক্ষে জনগণকে বিভ্রান্ত করা এবং কংগ্রেসকে দুর্বল করাই বিজেপির মূল উদ্দেশ্য,” দাবি প্রদেশ কংগ্রেসের।

সংগঠনের কড়া ভাষায় আরও বলা হয়— ‘বন্দেমাতরম’ নিয়ে আরএসএস–বিজেপির কোনও নৈতিক অধিকার নেই। তাদের মিথ্যাচার ও ইতিহাস বিকৃতির নিন্দা জানিয়ে কংগ্রেস বলেছে, বাংলার মানুষ এবং দেশের জনসাধারণই আজ বুঝতে পারছেন এই প্রচারের পিছনে কী উদ্দেশ্য লুকিয়ে রয়েছে।

Leave a Reply