বাংলাদেশ ভারত থেকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রত্যর্পণ চেয়ে ইন্টারপোলের সাহায্য চায়

ঢাকা, ১৯ নভেম্বর : বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন প্রশাসন শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ভারতের কাছে প্রত্যর্পণ করার জন্য ইন্টারপোলের সাহায্য নিতে প্রস্তুত। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) ঢাকা তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশের প্রশাসন ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানের জন্য রেড নোট জারি করতে চায়।

প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম জানিয়েছেন, “দ্বিতীয় রেড নোটের জন্য আবেদন করার প্রস্তুতি চলছে। আদালতের প্রদত্ত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে ইন্টারপোলের মাধ্যমে এই রেড নোটের জন্য আবেদন করা হবে।”

শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামাল ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া ছাত্র আন্দোলন এবং সহিংসতার সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এই আন্দোলনকে ইসলামি উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলি হাইজ্যাক করে এবং শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে অপসৃত হন, এরপর তিনি ভারতে পালিয়ে যান।

এছাড়া, সরকারি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতে শেখ হাসিনা এবং কামালের প্রত্যর্পণ সম্পর্কে একটি নোট পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পাঠানো হতে পারে। তবে, ভারতের পক্ষ থেকে এখনো এই বিষয়ে সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১৩ সালে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি সই হয়, যা সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের প্রত্যর্পণের বিষয়ে সহায়ক। তবে, এই চুক্তির অধীনে “রাজনৈতিক” দৃষ্টিকোণ থেকে কোন আবেদন অগ্রাহ্য হতে পারে। আইন বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই চাহিদা রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর হয়ে উঠতে পারে এবং এটি আইনি জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।

শেখ হাসিনা এবং কামাল এই মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে উপস্থিত হতে হবে, যা বিশেষ ট্রাইব্যুনালের আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক। তবে, তারা উভয়েই এই দণ্ডকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে” প্রণীত এবং “বিচার বহির্ভূত” বলে অভিহিত করেছেন।

বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই রায়কে “চালাকি আদালতের রায়” বলে নিন্দা করা হয়েছে এবং তারা এটিকে “পক্ষপাতদুষ্ট এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে মন্তব্য করেছেন।

এদিকে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এই রায় ছিল “অনেকটা প্রত্যাশিত” এবং অভিযোগ করেছেন যে, এই আদালত শুধু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে নিঃশেষ করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গঠন করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, ভারতের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।