ত্রিপুরায় ব্যাংক প্রতারণার ধাক্কা: আড়াই কোটি টাকার চাঞ্চল্যকর কেলেঙ্কারি গ্রামীণ ব্যাঙ্কে, থানায় মামলা

আগরতলা, ১৭ নভেম্বর : আগরতলা পুর নিগমের চেক জালিয়াতি করে ইউকো ব্যাঙ্ক থেকে ষোল কোটি টাকার উপর হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাঙ্কে নতুন প্রতারণার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। অভিযোগ উঠেছে, ঋণের নামে সাধারণ নাগরিকদের আড়াই কোটি টাকারও বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাঙ্কের অভয়নগর মুল শাখা থেকে। অভিযোগ অনুযায়ী, ব্যাংকের এক মহিলা ম্যানেজার জাল কাগজপত্র দেখেও ঋণ অনুমোদন দেন এবং কমিশন খেয়ে ঋণ প্রদান করেন। অভ্যন্তরীণ অডিটে এই প্রতারণার তথ্য ধরা পড়ার পর ম্যানেজারকে প্রথমে সাসপেন্ড করা হয় এবং পরে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

মামলা (নম্বর ৭০/২০২৫) এনসিসি থানায় দায়ের করা হয়েছে। তদন্তে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত উনিশজনের জড়িত থাকা এই চক্র জাল প্যান কার্ড ও জাল পে স্লিপ ব্যবহার করে মোট দুই কোটি তিপ্পান্ন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিল। বেশিরভাগ ঋণগ্রহীতা সরকারি চাকরি করেননি, যদিও কিছু সরকারি কর্মচারীও জড়িত ছিলেন।

থানার ওসি প্রজিৎ মালাকার জানান, মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই কয়েকজন অভিযুক্ত ব্যাংকে টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন। তদন্তের পরই গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হবে।

এই প্রতারণার ঘটনা আগরতলা শহরে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, একের পর এক বড় ধরনের প্রতারণা ধরা পড়ায় রাজ্যের সাধারণ মানুষ অস্বস্তিতে রয়েছে। আগরতলা ক্রাইম ব্রাঞ্চ বর্তমানে পুর নিগমের ইউকো ব্যাঙ্ক চেক জালিয়াতি এবং অন্যান্য বড় মামলা তদন্তের মধ্যে থাকায় গ্রামীণ ব্যাঙ্কের এই আড়াই কোটি টাকার কেলেঙ্কারি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে।

উল্লেখ্য, মামলার অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছে এডি নগরের বাপন সাহা, শ্রীনগরের রণজিৎ মজুমদার, যোগেন্দ্রনগরের সুমন সাহা, রাঙ্গুটিয়ার লিটন সরকার, টাকারজলার বিষ্ণু দেববর্মা, ধলেশ্বরের সৌমেন বনিক সহ আরও উনিশজন। তাদের নোটিশ দিয়ে এনসিসি থানায় ডাকা হয়েছে, তবে অনেকেই জানেন না তাদের নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে।

রাজ্যের সাধারণ জনগণ এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং দাবি করছেন, সুষ্ঠ তদন্ত ও দ্রুত অভিযুক্তদের দণ্ড নিশ্চিত করা হোক।