বিশালগড়, ৭ নভেম্বর: সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কিছু অসাধু ঠিকাদারের বেপরোয়া দুর্নীতির কারণে রাজ্য সরকারের সুনাম কলঙ্কিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রীর স্বচ্ছ প্রশাসনের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করতে উঠেপড়ে লেগেছে একাংশ ঠিকাদার ও দপ্তরের কিছু কর্মী এমনই দাবি এলাকাবাসীর।
প্রায় ১৭ বছর পর বিশালগড় নিউ মার্কেট থেকে লক্ষ্মীবিল হয়ে নবশান্তিগঞ্জ বাজার পর্যন্ত রাস্তাটির সংস্কারকাজ শুরু হলেও, শুরুতেই উঠে পড়েছে দুর্নীতির গন্ধ। চার কোটিরও বেশি টাকার এই প্রকল্পের কাজের গুণমান নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে সাধারণ মানুষ। সংস্কারের কাজ শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই উঠে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন আস্তরণ। কোথাও কোথাও খসে পড়ছে নতুন বিছানো পিচ, আবার কোথাও ব্যবহারই করা হয়নি পর্যাপ্ত বিটুমিন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তার ওপর হাত দিলেই উঠে আসছে আস্তরণ। রাস্তা তৈরির কাজ হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে। দপ্তরের কর্মীরা চোখের সামনে এই অনিয়ম দেখেও চুপ।
পূর্ত দপ্তরের তত্ত্বাবধানে কাজের বরাত পেয়েছেন বিশালগড় অফিসটিলার ঠিকাদার জহর সুর চৌধুরী। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদার এবং দপ্তরের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার পিযুষ মালাকার-এর মধ্যে গোপন বোঝাপড়ায় চলছে এই দুর্নীতিগ্রস্ত কাজ। দপ্তরের কর্মীরা কোনও বাধা না দিয়ে বরং শ্রমিকদের সাফাই গেয়ে যাচ্ছেন।
রাস্তার মান নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এই রাস্তা বহু বছর ধরে বেহাল অবস্থায় ছিল। চলাচলে চরম অসুবিধা হচ্ছিল। সরকার অবশেষে রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু সেই কাজ যদি দুর্নীতিতে ভরে যায়, আমরা চুপ থাকব না।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদার জহর সুর চৌধুরী নাকি কাজের স্থলে একদিনের বেশি যাননি। বরং দপ্তরের অফিসারদের মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ‘ম্যানেজ’ করেই ঘরে বসে কাজ চালাচ্ছেন তিনি। স্থানীয় সূত্রের দাবি, এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রাজেশ বাবু ছোট ঠিকাদারদের কাজ কড়াভাবে তদারকি করলেও, জহর সুর চৌধুরীর মতো বড় ঠিকাদারদের ক্ষেত্রে নাকি চোখ বুজে ছাড় দিয়ে দেন।
এর ফলে সরকারি কাজের নামে ঠিকাদাররা কোটিপতি হয়ে উঠছেন, দপ্তরের কিছু অফিসার ও রাজনৈতিক নেতাদের পকেট গরম হচ্ছে, আর সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন তাঁদেরই ট্যাক্সের টাকায়।
এখন দেখার বিষয় প্রশাসন ও পূর্ত দপ্তর এই দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ঠিকাদার ও কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় কি না, নাকি ‘লক্ষ্মীর নোট’-এর প্রভাবে চুপ করে থাকে।

