বাংলাদেশ সফরে পাকিস্তানের সেনাকর্তা, বৈঠক করলেন ইউনূসের সঙ্গে

লতিফুর রহমান, ঢাকা, ২৬ অক্টোবর: বহু বছর পর ঢাকায় এমন উচ্চপর্যায়ের পাকিস্তানি সেনা আধিকারিকের সফর— তাই নজর এখন দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক মহলে। শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসেন পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির (সিজেসিসি) চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং বিনিয়োগ সম্প্রসারণের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের দুই দেশ একে অপরকে সমর্থন করবে।”
জেনারেল মির্জা জানান, করাচি ও চট্টগ্রামের মধ্যে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক নৌ চলাচল ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে এবং ঢাকা–করাচি বিমান রুটও কয়েক মাসের মধ্যেই চালু হবে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের উত্তেজনা প্রশমনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি উভয় পক্ষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া খবর ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়ো খবর ও ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি হচ্ছে। এটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় বৈশ্বিকভাবে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।”
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাই কমিশনার ইমরান হায়দার।
নয়া কূটনৈতিক সমীকরণে চিন্তিত ভারত: দিল্লির সাউথ ব্লকের নজর এখন এই ঘটনায়। বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বিশেষত নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে, বিদেশ নীতিতে নতুন ভারসাম্য খুঁজছে। এই অবস্থায় ইসলামাবাদের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক উষ্ণ হওয়া ভারতের জন্য একটি কৌশলগত সতর্কবার্তা।
ভারতের এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকের ভাষ্য, “বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা, সন্ত্রাসবিরোধী অঙ্গীকার ও আঞ্চলিক শান্তি রক্ষায় ভারতের গভীর আগ্রহ রয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধি পেলে দিল্লির দৃষ্টি সেদিকেই থাকবে।”
পাকিস্তানের নতুন কূটনৈতিক তৎপরতা: দক্ষিণ এশিয়ায় নিজের প্রভাব পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ইসলামাবাদ যে নতুন করে সক্রিয় হয়েছে, তা স্পষ্ট। গত কয়েক মাসে পাকিস্তানের একাধিক মন্ত্রী ঢাকা সফর করেছেন। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলেন সর্বোচ্চ সামরিক আধিকারিকদের একজন৷ পর্যবেক্ষকদের মতে, এটি পাকিস্তানের এক ধরনের কূটনৈতিক ‘টেস্ট কেস’, যেখানে তারা দেখতে চাইছে নতুন বাংলাদেশের সঙ্গে কতটা ঘনিষ্ঠ হওয়া সম্ভব।
দিল্লির বার্তা স্পষ্ট: ভারত সরকার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও প্রতিক্রিয়া না দিলেও বিদেশ মন্ত্রকের সূত্রের বক্তব্য, “বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গভীর, ঐতিহাসিক এবং পারস্পরিক বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে। আমরা আশা করি ঢাকা তার দীর্ঘমেয়াদি আঞ্চলিক অঙ্গীকারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এগোবে।”
দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক অঙ্গনে এখন প্রশ্ন একটাই — শেখ হাসিনার পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ কোন দিকে ঝুঁকবে? পাকিস্তানের এই সফর কি শুধু সৌজন্য সাক্ষাৎ, নাকি আড়ালে নতুন ভূরাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা— সেটাই এখন সময়ই বলবে।