ইন্দ্রনগর কালী মন্দিরে কুমারী পূজা শেষে পুরোহিতদের শাস্ত্রসম্মত ব্যাখ্যা — দেবী কুমারীরূপে আবির্ভাবের ঐতিহ্য স্মরণ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ অক্টোবর:
মঙ্গলবার ইন্দ্রনগর কালী মন্দিরে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে সম্পন্ন হয় কুমারী পূজা। পূজা শেষে মন্দিরের পুরোহিত তন্ময় চক্রবর্তী ও জয়ন্ত চক্রবর্তী ভক্তদের উদ্দেশে কুমারী পূজার তাৎপর্য ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।
তাঁরা জানান, শাস্ত্র ও পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে একসময় কোলাসুর (বা বানাসুর) নামে এক অসুর স্বর্গ ও মর্ত্য অধিকার করলে দেবতারা দেবী মহাকালীর শরণাপন্ন হন। দেবতাদের প্রার্থনায় দেবী কুমারীরূপে আবির্ভূতা হয়ে সেই অসুরকে বধ করেন। সেই থেকেই পৃথিবীতে কুমারী পূজার সূচনা হয়।
পুরোহিতদের মতে, কুমারী পূজা নারী জাতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং মানুষের মনের অশুভ ও পাশবিক প্রবৃত্তিকে বিনাশ করার প্রতীক। এই পূজার মাধ্যমে নারীশক্তির পবিত্র রূপ ও শক্তির আরাধনা করা হয়।
ঐতিহাসিকভাবে, স্বামী বিবেকানন্দই আধুনিক যুগে কুমারী পূজাকে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় করেন। ১৮৯৮ সালে কাশ্মীর ভ্রমণের সময় তিনি প্রথম এক মুসলিম কন্যাকে কুমারী জ্ঞানে পূজা করেন। পরে ১৯০১ সালে কলকাতার বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গাপূজার আয়োজন করেন এবং নয়জন কুমারীকে দেবী রূপে পূজা দেন। সেই সময় থেকেই বেলুড় মঠে কুমারী পূজার ঐতিহ্য অব্যাহত রয়েছে।
পুরোহিত তন্ময় ও জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, স্বামী বিবেকানন্দ শ্রীরামকৃষ্ণের মাতৃভাব ও নারী জাতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা থেকেই এই পূজার প্রচলন করেন। শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন, “শুদ্ধাত্মা কুমারীতেই ভগবতীর প্রকাশ।”
ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই পূজায় উপস্থিত ছিলেন বহু ভক্ত। তাঁরা দেবীর আরাধনার পাশাপাশি নারীশক্তির মহিমা স্মরণ করেন ও সমাজে নারীর সম্মান প্রতিষ্ঠার বার্তা তুলে ধরেন।