ওয়াশিংটন, ১৬ অক্টোবর: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে “দারুণ মানুষ” ও “বন্ধু” বলে অভিহিত করে জানিয়েছেন, ভারত তাকে আশ্বস্ত করেছে যে, তারা শীঘ্রই রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপকে “বড় সিদ্ধান্ত” হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, “মোদি একজন দারুণ নেতা। ও আমার বন্ধু, ও ট্রাম্পকে ভালোবাসে। আমি ওর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করতে চাই না।”
তিনি আরও বলেন, “আমি বহু বছর ধরে ভারতকে পর্যবেক্ষণ করছি। এত বড় একটা দেশ, আর প্রতি বছর নতুন নেতা আসত। কিন্তু আমার বন্ধু অনেক বছর ধরে আছেন।”
ট্রাম্প দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি তাকে জানিয়েছেন যে, ভারত খুব শীঘ্রই রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে। “সে আমাকে আশ্বস্ত করেছে—রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করা হবে। এটা একদিনে হয় না, এটা একটা প্রক্রিয়া, তবে প্রক্রিয়াটা শীঘ্রই শেষ হবে,” বলেন ট্রাম্প।
তিনি আরও জানান, “আমরা খুশি ছিলাম না ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে দেখে। কারণ, এতে পুতিনের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পেছনে অর্থ যোগান মিলছে।”
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, ভারতের প্রধান অগ্রাধিকার হলো একটি অস্থির বিশ্ব জ্বালানি বাজারে দেশের ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “ভারত একটি উল্লেখযোগ্য তেল ও গ্যাস আমদানিকারক দেশ। আমাদের আমদানিনীতির মূল উদ্দেশ্য হলো ভারতীয় ভোক্তার স্বার্থ রক্ষা করা।”
তিনি আরও বলেন, “স্থিতিশীল জ্বালানি মূল্য এবং নিরাপদ সরবরাহ নিশ্চিত করাই আমাদের জ্বালানি নীতির মূল লক্ষ্য। এর জন্য আমরা উৎসের বৈচিত্র্য আনছি এবং বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।”
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম মোদি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল না কিনুক, কারণ এতে যুদ্ধ থামানো সহজ হতো। সে আমাকে বলেছে তারা আর তেল কিনবে না, এবং যুদ্ধ শেষ হলে আবার কিনতে পারে।”
একইসঙ্গে ট্রাম্প ভারতের ওপর আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছেন, যার মধ্যে রাশিয়ান তেল কেনার জন্য অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
এই পদক্ষেপকে “অন্যায়, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য” বলে কড়া ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে ভারত।
ফেব্রুয়ারি ২০২২-এ ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের পর থেকেই পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার মুখে রাশিয়া তেলের দাম ব্যাপক হারে কমায়। এতে রাশিয়ান তেলের প্রতি ঝুঁকে পড়ে ভারত, যা আগে ভারতের মোট আমদানির ১ শতাংশেরও কম ছিল, তা এক লাফে বেড়ে হয় ৪০ শতাংশের কাছাকাছি।
সেই সময় থেকে ভারত দ্বিতীয় বৃহত্তম রাশিয়ান জ্বালানী আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়, চীনের পরেই।
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, ভারতের এই অবস্থান ও মার্কিন শুল্ক নিয়ে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এখন উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
—

