কৈলাসহর, ১৬ অক্টোবর: কৈলাসহরের গৌরনগর ব্লকের অন্তর্গত জলাই গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত জলাই উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রেসার, ক্যালসিয়াম ও প্যারাসিটামল ট্যাবলেট বিতরণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের ভাবমূর্তিতেই প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ সেবনের ফলে কয়েকজন গ্রামবাসী অসুস্থ হয়ে পড়েন যার মধ্যে অন্যতম ৯৫ বছর বয়সী বীনা মাহিষ্য দাস। তাঁর ছেলে সেন্টু মাহিষ্য দাস জানান, জলাই উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে প্রেসারের ঔষধ এনে মাকে খাওয়ানোর পর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঔষধের গায়ে লেখা মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ দেখে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। পরে অন্যান্য গ্রামবাসীরাও বাড়িতে থাকা ঔষধ পরীক্ষা করে দেখতে পান, অনেক ঔষধই মেয়াদ উত্তীর্ণ।
এরপরই গ্রামবাসীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং জলাই উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে এর প্রতিবাদ জানান। অভিযোগ, সেন্টারের কমিউনিটি হেলথ অফিসার অভিযোগ পাওয়ার পর ট্যাবলেটের গায়ের তারিখের স্থানটি কেটে ঔষধ বিলির চেষ্টা করেন, যা আরো প্রশ্নের জন্ম দেয়।
এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চললেও,স্থানীয় সংবাদ প্রতিনিধিদের অনুসন্ধানে বিষয়টি চূড়ান্তভাবে প্রকাশ্যে আসে এবং কনিকা মেমোরিয়াল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার দেবাশীষ দেববর্মার নির্দেশে তিন সদস্যের একটি তদন্তকারী দল জলাই উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপস্থিত হন। চিকিৎসক সপ্তর্ষি চক্রবর্তীর নেতৃত্বে গঠিত দলটি তদন্তে এসে মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ ও হিমোগ্লোবিন টেস্ট কিট থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন।
চিকিৎসক সপ্তর্ষি চক্রবর্তী সংবাদমাধ্যমকে জানান,তদন্তে প্রমাণ মেলে যে মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ ও কিট ব্যবহার করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীরাও তাদের অভিযোগ তুলে ধরেছেন।
এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে, যারা উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করিয়েছেন, তাদের মেয়াদ উত্তীর্ণ কিট দিয়েই টেস্ট করা হয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, কিছু অসাধু মেডিকেল অফিসারের এই গাফিলতি শুধু সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেই ফেলেনি, বরং মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রী মানিক সাহার নেতৃত্বাধীন সরকারের ভাবমূর্তিতেও আঘাত হেনেছে।
এখন দেখার বিষয়, স্বাস্থ্য দপ্তর এই ঘটনায় অভিযুক্ত কমিউনিটি হেলথ অফিসারের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এমন গাফিলতির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের দাবিতে সরব হয়েছেন এলাকাবাসী।

