মোদী “ট্রাম্পভীত”, রুশ তেল কিনবে না ভারতের সিদ্ধান্ত আমেরিকার হাতে ছেড়ে দিয়েছেন: রাহুল গান্ধীর অভিযোগ

নয়াদিল্লি, ১৬ অক্টোবর : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের “ভয়ে” রুশ তেল কেনা বন্ধের সিদ্ধান্ত আমেরিকার হাতে ছেড়ে দিয়েছেন—এমন বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। বৃহস্পতিবার এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ একাধিক পোস্টে তিনি মোদীর বিরুদ্ধে বিদেশনীতি ও কূটনৈতিক স্বাবলম্বিতার প্রশ্নে সরাসরি আক্রমণ শানান।

রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, “প্রধানমন্ত্রী মোদী ট্রাম্পের ভয়ে কাঁপছেন। তিনি ট্রাম্পকে সিদ্ধান্ত নিতে দিচ্ছেন যে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনবে না। একের পর এক অবজ্ঞা সত্ত্বেও মোদী অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়ে যাচ্ছেন। তিনি অর্থমন্ত্রীর আমেরিকা সফর বাতিল করেছেন, শার্ম আল-শেখে যাননি, ‘অপারেশন সিন্দুর’ নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্যেরও বিরোধিতা করেননি।”

এই প্রতিক্রিয়া আসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক এক মন্তব্যের পর, যেখানে তিনি দাবি করেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে ভারত আর রাশিয়া থেকে তেল কিনবে না। ট্রাম্প বলেন, “মোদী আমার বন্ধু। তিনি আজ আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে ভারত রাশিয়া থেকে আর তেল কিনবে না। এটা একটা বড় পদক্ষেপ। এখন আমাদের চীনের সঙ্গেও এটা নিশ্চিত করতে হবে।”

এই প্রসঙ্গে আরও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (যোগাযোগ) জয়রাম রমেশ। এক্স-এ তিনি লেখেন, “২০২৫ সালের ১০ মে, ভারতীয় সময় বিকেল ৫:৩৭-এ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও প্রথম ঘোষণা করেন যে ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ বন্ধ করেছে। তারপর থেকে ট্রাম্প পাঁচটি দেশে ৫১ বার দাবি করেছেন যে তিনিই এই অভিযান বন্ধ করিয়েছেন শুল্ক ও বাণিজ্য চাপের মাধ্যমে। অথচ আমাদের প্রধানমন্ত্রী তখনও চুপ ছিলেন।”

তিনি আরও বলেন, “এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন যে মোদী তাকে আশ্বস্ত করেছেন, ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করবে না। এটা প্রমাণ করে যে মোদী কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভারও আমেরিকার হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। ৫৬ ইঞ্চির ছাতি এখন সংকুচিত হয়ে পড়েছে।”

উল্লেখ্য, ভারত বর্তমানে রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম জ্বালানি তেল ক্রেতা, চীনের পরে। ইউক্রেন আক্রমণের পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও ইউরোপীয় চাহিদা হ্রাসের ফলে রাশিয়া তেল রফতানিতে বড় ছাড় দেয়, যা ভারত ব্যাপকভাবে কাজে লাগায়। রুশ তেলের আমদানির হার ১% থেকে বেড়ে প্রায় ৪০% পৌঁছে যায় ভারতের মোট আমদানির হিসাবে।

যদিও ভারত সরকারের অবস্থান—তেল আমদানি জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা ও নাগরিকদের জন্য সাশ্রয়ী দামের কথা ভেবেই করা হয়। ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে ভারত তার “স্বাধীন ও ভারসাম্যপূর্ণ” নীতিকেই সামনে রেখেছে।

এই বিতর্কের পর কূটনৈতিক মহলে আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে—ভারতের পররাষ্ট্রনীতি ও কৌশলগত স্বাধীনতা আদৌ কতটা বজায় আছে, এবং বিদেশি চাপ মোকাবিলায় বর্তমান নেতৃত্ব কতটা সক্ষম।