চেন্নাই, ১৫ অক্টোবর: গত ২৭ সেপ্টেম্বর তামিলনাড়ুর কারুরে একটি রাজনৈতিক সমাবেশে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ পদদলনের ঘটনা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে চরম রাজনৈতিক টানাপোড়েন। বুধবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন জনপ্রিয় অভিনেতা বিজয় এবং তাঁর রাজনৈতিক দল তামিলাগা ভেট্ট্রি কাজাগম-কে। তিনি দাবি করেন, ওই সমাবেশে সংগঠনের চরম সময়সূচি বিভ্রাট, নিরাপত্তার ঘাটতি ও অব্যবস্থাপনাই ৪১ জনের প্রাণহানির কারণ।
স্টালিন জানান, পুলিশের কাছে প্রথমে জানানো হয়েছিল যে অনুষ্ঠানটি বিকেল ৩টা থেকে ৫ ঘণ্টা চলবে। পরে হঠাৎ জানানো হয়, বিজয় দুপুর ১২টায় উপস্থিত হবেন, ফলে পুলিশ বাহিনীর মোতায়েন পরিকল্পনায় বড় পরিবর্তন আনতে হয়। কিন্তু বাস্তবে বিজয় ৭ ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছন, তখন ইতিমধ্যে বিশাল ভিড় জমে যায় এবং তার গাড়িও আটকে পড়ে ভিড়ের মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে পদদলনের ঘটনা ঘটে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন, টিভিকে মঞ্চস্থ সমাবেশে প্রাথমিক সুযোগ-সুবিধার — যেমন পানীয় জল, মহিলা শৌচালয় ইত্যাদির — ঘাটতি ছিল, এবং আহতদের উদ্ধার করতে গেলে দু’জন অ্যাম্বুলেন্স চালককে টিভিকে কর্মীরা মারধর করে। তাঁদের অ্যাম্বুলেন্সও ভাঙচুর করা হয়। এই ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যেই মামলা রুজু করেছে।
টিভিকে এবং বিজয় দাবি করেন, রাজ্য সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে আরও বিভ্রান্তি তৈরি করে। এর জবাবে স্টালিন বলেন, পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপ না হয়, তাই জেনারেটর বন্ধ করা হয়েছিল নিরাপত্তার কারণে। তিনি জানান, লাইটহাউস কর্নার ও উঝাভার মার্কেটে সমাবেশের জন্য অনুমতি চাওয়া হলেও, সেই এলাকাগুলি ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় কারুর মাঠে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়, তাও ১১টি শর্তসাপেক্ষে।
স্টালিন জানান, পুলিশের কাছে অনুমান ছিল ১০,০০০ জনের ভিড় হবে, তবে পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুসারে ২০,০০০ মানুষের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ২৫,০০০-র বেশি লোক জড়ো হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং ব্যারিকেড ভেঙে যায়। তিনি বলেন, সমস্ত প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত ভিড়ে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যায়নি।
অন্যদিকে, এনডিএ-র আট সদস্যের এক তদন্ত কমিটি এই ঘটনাকে ‘সম্পূর্ণ প্রশাসনিক ব্যর্থতা’ বলে বর্ণনা করেছে এবং রাজ্য সরকারকেও দোষারোপ করেছে। বিজয় এবং টিভিকে দাবি করেছেন, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল এবং মুখ্যমন্ত্রী স্টালিন ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচনের আগে প্রতিপক্ষকে বিপদে ফেলতে এই পরিস্থিতি তৈরি করেছেন।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট এই পদদলনের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সিবিআই-কে। এই তদন্ত পর্যবেক্ষণ করবেন প্রাক্তন বিচারপতি অজয় রাস্তোগি-র নেতৃত্বে গঠিত একটি তিন সদস্যের কমিটি। টিভিকে এই সিবিআই তদন্তকে স্বাগত জানিয়েছে। এখন পর্যন্ত টিভিকে-এর দুইজন শীর্ষস্থানীয় নেতা — সাধারণ সম্পাদক এন ‘বাসি’ আনন্দ এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্মল শেখর-এর বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে এবং দু’জন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তামিলনাড়ু রাজনীতিতে উত্তেজনার পারদ চড়ছে, এবং আগামী নির্বাচনের আগে এই বিতর্ক নতুন মোড় নিতে চলেছে বলেই রাজনৈতিক মহলের অভিমত।

