জাতিসংঘের রেজোলিউশন ২৭৫৮-তে তাইওয়ানের নাম নেই, জানাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন — চীনের দাবি ‘ভুল ব্যাখ্যা’

তাইওয়ান, ৭ অক্টোবর : জাতিসংঘের ১৯৭১ সালের রেজোলিউশন ২৭৫৮-এ তাইওয়ানের কোনও উল্লেখ নেই, এটি মূলত জাতিসংঘে প্রতিনিধিত্ব পরিবর্তন সম্পর্কিত একটি সিদ্ধান্ত ছিল — এমনটাই জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। চীনের সাম্প্রতিক দাবি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে এই বক্তব্য দেয় ইইউ, যেখানে বেইজিং বলছে এই রেজোলিউশন তাদের তাইওয়ান নিয়ে সার্বভৌম দাবির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়।

চীন দাবি করছে, এই রেজোলিউশন অনুযায়ী, তারা তাইওয়ানের উপর পূর্ণ সার্বভৌম অধিকার পেয়েছে এবং এটি তাদের “একচীন নীতি”র ভিত্তি। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি একটি দীর্ঘ বিবৃতিতে এই বিষয়টি পুনরায় উত্থাপন করে।

তবে তাইওয়ান এই ব্যাখ্যাকে “ভুল এবং বিভ্রান্তিকর” বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের মতে, চীন এই রেজোলিউশনকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ভবিষ্যতে তাইওয়ানে আগ্রাসনের আইনি ভিত্তি তৈরির চেষ্টা করছে।

ইইউ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “জাতিসংঘ রেজোলিউশন ২৭৫৮ খুবই সংক্ষিপ্ত – মাত্র ১৫০ শব্দ। এই ১৫০ শব্দের কোথাও ‘তাইওয়ান’ শব্দটি উল্লেখ করা হয়নি।”
তারা আরও বলে, “এই রেজোলিউশনটি ‘চিয়াং কাই-শেকের প্রতিনিধিদের’ পরিবর্তে ‘চীনের গণপ্রজাতন্ত্র সরকারের প্রতিনিধিদের’ জাতিসংঘে প্রতিনিধিত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল।”

উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সালের চীন গৃহযুদ্ধের পর চিয়াং কাই-শেকের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী সরকার তাইওয়ানে চলে যায় এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত জাতিসংঘে চীনের আসন ধরে রাখে। ১৯৭১ সালে রেজোলিউশন ২৭৫৮ পাস হলে সেই আসন বেইজিংয়ের হাতে যায়।

এই ইস্যুতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও মন্তব্য দেয়নি।

এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রও এই রেজোলিউশনের চীনা ব্যাখ্যাকে “ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত” বলে অভিহিত করেছে এবং বলেছে, চীন এটি ব্যবহার করে তাইওয়ানকে আন্তর্জাতিক মহল থেকে বিচ্ছিন্ন করার কৌশল নিচ্ছে।

ইইউ-র মুখপাত্র আরও বলেন, “জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে চীনের দায়িত্ব রয়েছে আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি মেনে চলার। এর মধ্যে রয়েছে বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকা এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা।”

উল্লেখযোগ্য যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনও সদস্য রাষ্ট্র তাইওয়ানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখে না, তবে ইউরোপে তাইওয়ানের প্রভাব ও যোগাযোগ বাড়াতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করেছে তাইপেই। গত মাসেই তাইওয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুইবার ইউরোপ সফর করেন।