নয়াদিল্লি, ৬ অক্টোবর : ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) সোমবার ঘোষণা করেছে যে, বিহার বিধানসভা নির্বাচন দুই দফায় অনুষ্ঠিত হবে—প্রথম দফা ৬ নভেম্বর এবং দ্বিতীয় দফা ১১ নভেম্বর। ভোট গণনা হবে ১৪ নভেম্বর।
সোমবার সাংবাদিকদের উদ্দেশে ব্রিফিংয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার, নির্বাচন কমিশনার সুখবীর সিং সান্ধু এবং বিবেক জোশির সঙ্গে উপস্থিত থেকে জানান, “বিহার নির্বাচন হলো সব নির্বাচনের ‘মা’ — এটাই ভারতের গণতন্ত্রের প্রাণ।” তিনি আশ্বাস দেন যে নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু, এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
২০২৫ সালের এই বিধানসভা নির্বাচনটি বিহারে প্রথম, যেখানে বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনা শেষে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। নতুন তালিকায় ভোটারের সংখ্যা ৭ কোটি ৪৩ লাখ, যার মধ্যে ১৪ লাখ প্রথমবারের ভোটার। কমিশন জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে হালনাগাদ ভোটার তালিকা পেয়েছে, এবং মনোনয়ন দাখিলের ১০ দিন আগে পর্যন্ত সংশোধনের সুযোগ থাকবে।
ভুয়ো খবর রুখতে নির্বাচন কমিশন বিশেষ উদ্যোগ ঘোষণা করেছে। প্রতিটি জেলার পর্যায়ে গঠন করা হবে ভুয়ো তথ্য প্রতিরোধ সেল, যা সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো বিভ্রান্তিকর তথ্য শনাক্ত ও মোকাবিলা করবে। পাশাপাশি, এবার প্রতিটি ২৪৩টি আসনে নিয়োগ করা হবে আলাদা পর্যবেক্ষক—আগে একজন পর্যবেক্ষক একাধিক আসন দেখভাল করতেন।
ইসিআই-এর এই ঘোষণার আগে রাজ্যের নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে কমিশন বিস্তারিত পর্যালোচনা করে এবং প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক সম্পন্ন করে। বর্তমান বিধানসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২২ নভেম্বর, তাই তার আগেই ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচনের সময়সূচি এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে দীপাবলি ও ছট পূজার মতো প্রধান উৎসবের সঙ্গে তা না মেলে, যাতে ভোটারদের অংশগ্রহণ সর্বাধিক হয়।
২০২৫ সালের বিহার নির্বাচনকে ঘিরে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। একদিকে বিজেপি ও জেডিইউ-র নেতৃত্বে গঠিত রাজ্যের শাসক এনডিএ জোট, অন্যদিকে রয়েছে আরজেডি ও কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন মহাগঠবন্ধন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রশান্ত কিশোরের নবগঠিত ‘জন সুরাজ পার্টি’-ও এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, যা বিহারের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
২০২০ সালের নির্বাচনে এনডিএ ১২৫টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল, আর মহাগঠবন্ধন পেয়েছিল ১১০টি আসন। ওই নির্বাচনে আরজেডি এককভাবে সর্বাধিক ৭৫টি আসন পেয়েছিল এবং মোট ভোটদানের হার ছিল ৫৬.৯৩ শতাংশ।
এই বছর ভোটদানের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করতে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রতিটি বুথে ১,২০০ ভোটারের বেশি থাকবে না (আগে ছিল ১,৫০০), ফলে রাজ্যজুড়ে বুথের সংখ্যা বাড়িয়ে ৯০,০০০ করা হবে। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর অতিরিক্ত মোতায়েনের মাধ্যমে নির্বাচনী নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্ন ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
______

