**কারুরে টিভিকে সভায় ভয়াবহ হুড়োহুড়ি, ৩৯ জন নিহত, বিজয়ের ঘনিষ্ঠ সহকারীসহ একাধিক নেতা অভিযুক্ত**
**চেন্নাই, ২৮ সেপ্টেম্বর:** তামিলনাড়ুর কারুর জেলায় তামিলগা ভেট্রি কাজগমের (টিভিকে) নেতা অভিনেতা বিজয়ের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় শনিবার সন্ধ্যায় ভয়াবহ হুড়োহুড়ি ঘটে। অতিরিক্ত জনসমাগম, নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব ও অব্যবস্থাপনার কারণে এই দুর্ঘটনায় অন্তত ৩৯ জন প্রাণ হারান, প্রায় ১০০ জন গুরুতর আহত হন। আহতদের অনেককে স্থানীয় হাসপাতাল এবং তিরুচিরাপল্লি ও সেলম জেলার মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় টিভিকে-র শীর্ষস্থানীয় নেতা এন আনন্দ, সি টি নির্মল কুমার এবং কারুর পশ্চিম জেলা সম্পাদক ভি পি মথিয়াঝগানসহ একাধিক নেতার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযোগ, জনসভায় ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তার নানা বিধি লঙ্ঘন এবং আয়োজকদের গাফিলতির কারণে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে ভেলুসামিপুরমে সভা শুরু হওয়ার আগেই হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় জড়ো হতে শুরু করেন। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর বিজয়ের প্রচারগাড়ি আসার সাথে সাথে জনতা সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ঠেলাঠেলির কারণে এক পর্যায়ে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে পড়ে, যা মুহূর্তেই মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা বৃদ্ধি করে।
বিজয়ের বাড়ির নিরাপত্তা তীব্রভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে, কারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ প্রবল। মুখ্যমন্ত্রী এম.কে. স্টালিন নিহতদের পরিবারের জন্য ১০ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ১ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেন। পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অরুণা জগদীশনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে, যা ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করবে।
বিজয় সামাজিক মাধ্যমে শোক প্রকাশ করে মৃতদের পরিবারকে ২০ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা করেন। তিনি আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করেন এবং পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও শোকপ্রকাশ করেছেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্যের কামনা করেছেন। রাজ্য সরকার ৪৪ জন চিকিৎসক ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছে।
টিভিকে আইনজীবী আরিভাজাগন দাবি করেছেন, এই দুর্ঘটনা একটি ষড়যন্ত্র এবং তারা মাদ্রাজ হাই কোর্টে একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠনের বা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (CBI) তদন্তের জন্য আবেদন করেছে। তিনি তামিলনাড়ু পুলিশের তদন্তে বিশ্বাস না রাখার কথা উল্লেখ করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় শাসকদলের কিছু নেতার ষড়যন্ত্রের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, দ্মক এই ষড়যন্ত্রের অভিযোগ অস্বীকার করে বলে, “আইন নিজের কাজ করবে” এবং “অভিযোগকারীরা প্রথমে নিজেদের দলীয় নেতাদের আচরণ নিয়ে ভাবুক।”
সরকারি সূত্র বলেছে, সভাস্থলে অনুমোদিত জায়গার তুলনায় ২৭ হাজার লোক উপস্থিত ছিলেন, যেখানে জায়গার ধারণক্ষমতা মাত্র ১০ হাজার। সূত্রের দাবি, ভিড় বাড়াতে বিজয়ের আগমনে ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করা হয়েছিল। তবে টিভিকে আইনজীবী এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “দেরির কারণ ছিল ট্রাফিক জ্যাম।”
রাজ্য সরকার নিরাপত্তা বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে টিভিকে-র নেতাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মামলা করেছে এবং অবসরপ্রাপ্ত হাইকোর্ট বিচারপতির নেতৃত্বে বিচারিক তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। এখন দেখা যাচ্ছে, এই দুর্ঘটনা টিভিকে এবং বিজয়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যতে কতটা প্রভাব ফেলবে।

