নয়াদিল্লি, ২৮ সেপ্টেম্বর — প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ‘মন কি বাত’-এর ১২৬তম পর্বে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণে আসন্ন উৎসবের মরসুমে স্বদেশী পণ্য ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ভোকাল ফর লোকাল’ হোক আমাদের মূলমন্ত্র এবং উৎসবের আনন্দ হোক দেশীয় উৎপাদনের মর্যাদায় উজ্জ্বল। প্রধানমন্ত্রী জানান, সামনে একের পর এক উৎসব আসছে এবং বর্তমানে ‘জিএসটি বাঁচত উৎসব’ও চলছে। সেই প্রেক্ষিতে তিনি দেশবাসীকে দেশীয়ভাবে উৎপাদিত সামগ্রী কেনার সংকল্প নেওয়ার আহ্বান জানান। তাঁর মতে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন স্থানীয় শিল্পীদের পরিশ্রমের স্বীকৃতি দেয়, তেমনই একজন যুব উদ্যোগপতির স্বপ্নকে বাস্তব করে তোলে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উৎসবের সময় পরিচ্ছন্নতা শুধু বাড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে রাস্তাঘাট, পাড়া, বাজার এবং গ্রামেও ছড়িয়ে পড়া উচিত। তিনি আরও বলেন, এই সময়ে আমরা দেবীর শক্তির পূজা করি এবং দেশের কন্যারা এখন শিক্ষা, বিজ্ঞান, ক্রীড়া ও ব্যবসাসহ নানা ক্ষেত্রে নিজের পরিচয় গড়ে তুলেছেন। সেই প্রসঙ্গে তিনি ভারতীয় নৌবাহিনীর দুই সাহসী মহিলা অফিসার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার দিলনা ও রূপার কথা উল্লেখ করেন, যাঁরা ‘নাবিকা সাগর পরিক্রমা’ অভিযানে আট মাস সমুদ্রে কাটিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে নির্জন স্থানে, ‘পয়েন্ট নিমো’-তে ভারতের পতাকা উত্তোলন করেন। তাঁরা নৌকা করে এই স্থানে পৌঁছানো প্রথম ভারতীয়, এশীয় ও প্রথম মানব হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখান।
মোদী এদিন ঘোষণা করেন, সরকার ছট পূজাকে ইউনেসকোর অদৃশ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে কাজ করছে। তিনি জানান, দুর্গাপুজোর মতোই ছট পূজাও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলে বিশ্বের সামনে ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। তিনি আরও বলেন, আজকের ‘মন কি বাত’ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি শহিদ ভগৎ সিং ও সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের জন্মদিন। ভগৎ সিং-এর অমোঘ সাহসিকতা এবং লতা মঙ্গেশকরের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ গানগুলিকে প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন, ২ অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তীতে খাদি কেনার ঐতিহ্যকে সম্মান জানিয়ে দেশবাসী যেন অন্তত একটি খাদি পণ্য কেনেন এবং তা সামাজিক মাধ্যমে #ভোকালফরলোকাল হ্যাশট্যাগ দিয়ে ভাগ করেন। তিনি জানান, গত ১১ বছরে খাদি বিক্রিতে ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটেছে। তিনি উদাহরণ দেন তামিলনাড়ুর ‘যায ন্যাচারালস’-এর, যেখানে ঘাস ও কলার ফাইবার দিয়ে যোগা ম্যাট তৈরি হচ্ছে; ঝাড়খণ্ডের আশীষ সত্যব্রত সাহুর, যিনি ‘জোহারগ্রাম’ ব্র্যান্ডের মাধ্যমে আদিবাসী বস্ত্রশিল্পকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিয়ে গিয়েছেন; এবং বিহারের মধুবনির সুইটি কুমারীর, যিনি মিথিলা শিল্পের মাধ্যমে পাঁচশো মহিলার জীবনে পরিবর্তন এনেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বিজয়াদশমীর প্রসঙ্গে বলেন, এই উৎসব এবারে বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে কারণ এটি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ১০০ বছর পূর্তির দিন। তিনি স্মরণ করান, ১৯২৫ সালে ডঃ হেডগেওয়ার এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠা করেন এক কঠিন সময়ে, যখন দেশ পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিল। তিনি বলেন, আরএসএস আজও নিঃস্বার্থভাবে জাতীয় সেবায় নিবেদিত এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সবসময় সবার আগে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে।
আগামী ৭ অক্টোবর মহর্ষি বাল্মীকি জয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রামায়ণ রচনার মাধ্যমে মহর্ষি বাল্মীকি মানবতাকে ভগবান রামের আদর্শের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেন। তিনি বলেন, অযোধ্যায় রামমন্দিরের পাশাপাশি নিশাদরাজ ও বাল্মীকির মন্দিরও নির্মিত হয়েছে, যা সর্বজনীনতার প্রতীক। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী প্যারিসের ‘সেন্টার মণ্ডপা’-র ৫০ বছর পূর্তিতে ভারতীয় নৃত্যশিল্প প্রসারে তাদের অবদানের প্রশংসা করেন।
মোদী আজ ভূপেন হাজরিকার ‘মানুহে মানুহৰ বাবে’ গানটির তামিল ও সিংহলি অনুবাদ শ্রোতাদের শোনান এবং সম্প্রতি প্রয়াত গায়ক জুবিন গার্গ এবং দার্শনিক এস. এল. ভৈরাপ্পার প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
শেষে, প্রধানমন্ত্রী সকলকে দীপাবলির শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আত্মনির্ভর ভারতের পথে এগোতে গেলে আমাদের প্রতিটি উৎসব, প্রতিটি ক্রয় যেন দেশীয় পণ্যকে সমর্থন করে। তিনি বলেন, “আমাদের ঐতিহ্যই আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ার অন্যতম শক্তি।”

