নয়াদিল্লি, ২৬ সেপ্টেম্বর: অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে চলমান জাতীয় বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করল দিল্লি হাইকোর্ট। ২৪ বছর বয়সী এক যুবকের জামিন মঞ্জুর করতে গিয়ে বিচারপতি অরুণ মঙ্গা একক বেঞ্চের পর্যবেক্ষণে বলেন — ব্যক্তিগত বা রীতিনীতিভিত্তিক আইন যদি জাতীয় আইনের উপর আধিপত্য বিস্তার করে, তাহলে কি এখনই সময় নয় অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পথে এগোনোর?
এই মামলায় অভিযুক্ত এক মুসলিম যুবক, যিনি ইসলামি আইন অনুযায়ী ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীর সঙ্গে বিয়ে করেন। অভিযোগ ওঠে পকসো আইনের লঙ্ঘনের। যদিও ওই কিশোরী স্বামীকে সমর্থন করেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চালানোর বিরোধিতা করেন।
ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী, বয়ঃসন্ধি (সাধারণত ১৫ বছর ধরা হয়) অর্জনের পর বিয়ে বৈধ। কিন্তু ভারতের দণ্ডবিধি ও শিশু সুরক্ষা আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী কারও সঙ্গে যৌন সম্পর্ক আইনত ধর্ষণের শামিল।
বিচারপতি মঙ্গা বলেন, এই দ্বন্দ্বটি স্পষ্ট—ইসলামি আইন অনুযায়ী বিয়ে বৈধ হলেও, একই কাজ ভারতীয় ফৌজদারি আইনে অপরাধ। তাহলে কি একটি গোটা সম্প্রদায়কে তাদের দীর্ঘদিনের প্রথা মানার জন্য অপরাধী সাব্যস্ত করা উচিত?”
তিনি আরও বলেন, “ধর্মীয় স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, তা এমন কোন আচরণের ঢাল হতে পারে না যা শিশু ও দুর্বলদের সুরক্ষার জন্য তৈরি আইনকে লঙ্ঘন করে।
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে এক মধ্যমার্গের পরামর্শও উঠে এসেছে। যেমন—শিশু বিবাহের ক্ষেত্রে অভিন্ন ও কঠোর আইন প্রয়োগ করা যেতে পারে, কারণ এটি স্পষ্টভাবে বিএনএস ও পকসো-এর পরিপন্থী। অন্যদিকে, অপেক্ষাকৃত কম বিতর্কিত ব্যক্তিগত বিষয়গুলি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলতে পারে।”
এই মামলায় আদালত ইসলামি আইনের বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করে। যাঁদের মধ্যে ছিলেন চাণক্য ন্যাশনাল ল’ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ফৈজান মুস্তফা, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ও ওয়ক্সসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক আইনবিদ ও অধ্যাপক। এই পর্যবেক্ষণ এমন এক সময়ে এল, যখন ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৪ অনুযায়ী রাষ্ট্রকে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নের চেষ্টা করতে বলা হয়েছে, অথচ বাস্তবে বহু দশক ধরে এই নির্দেশ কার্যকর হয়নি।

