এসডিএমের দুর্ব্যবহারে অসুস্থ পুর পরিষদ কর্মী,বদলির দাবিতে রাস্তা অবরোধ স্থানীয়দের,আটকে পড়েন বিধায়ক, উত্তেজনা

আগরতলা, ২৫ সেপ্টেম্বর : আমবাসার মহকুমা শাসক (এসডিএম) রিঙ্কু রিয়াং-এর দুর্ব্যবহারের কারণে পুর পরিষদের কর্মী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। জানা গিয়েছে, তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীনে রয়েছে। তাছাড়া, তাঁর বিরুদ্ধে চরম অরাজকতা শুরু করার অভিযোগ উঠেছে। এরই প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করে স্থানীয়রা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁদের দাবি, এসডিএমকে অন্যত্র বদলি করা হোক। এদিকে, ওই অবরোধে রাস্তায় আটকে পড়েন ৪৭ করমছড়ার বিধায়ক চিত্তরঞ্জন দের্ববমা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছেন সিনিয়র ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। ওই ঘটনায় গোটা এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এসডিএমের দাবি, অতীতে এসডিএম-রা অফিসে পরিবেশ তৈরী করে গিয়েছিলেন, যার কারণে তাঁর দূর্ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আমবাসা মহকুমা শাসকের পরে রিঙ্কু রিয়াং একমাস হয়েছে মাত্র দায়িত্বভার করছেন। তারপর থেকেই চরম অরাজকতা শুরু করেছে বলে অভিযোগ। মহকুমা শাসকের কার্যালয়ের সরকারি কর্মীদের অ্যাটেনডেন্স দেখেন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। তাঁরা আরও জানান, সম্প্রতি সমস্ত বিএলওদের নিয়ে বৈঠক করছিলেন তিনি। ওই বৈঠকে বিএলওদের উদ্দেশ্য তীব্র আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন তিনি বলে অভিযোগ। পদাধিকার বলে আমবাসা পুর পরিষদের মুখ্যকার্যনিবাহী আধিকারিক তিনি।

তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, হঠাৎ আমবাসা পুর পরিষদের দপ্তরে যান এবং কর্মী কৃপাময় দেবকে আধঘন্টার মধ্যে ২০০৫ সালের ভোটার তালিকা বের করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু কৃপাময় দেব বলেন স্বল্পতার কারণে সেই কাজটি সম্পূর্ণ করতে পারেননি। এরপরই এসডিএম অফিসের মধ্যে দাঁড়িয়ে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ও অপমান করেন। এই ঘটনার পর মানসিক চাপে কৃপাময় দেব অসুস্থ হয়ে পড়েন। সহকর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে উদ্ধার করে ধলাই জেলার কোলাই হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীনে রয়েছেন। ওই ঘটনা চাউর হতেই ক্ষুদ্ধ স্থানীয়রা আমবাসা মহকুমা অফিসের নিকট ঢলুবাড়িতে পথ অবরোধে সামিল হয়েছেন। অবরোধের জেরে যানচলাচল স্তব্ধ হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী।

এরই মধ্যে ৪৭ করমছড়ার বিধায়ক চিত্তরঞ্জন দেববর্মা রাস্তা দিয়ে যাচ্চিলেন। ওই অবরোধের কারণে আটকে পড়েন তিনি। পরবর্তী সময়ে গাড়ি থেকে নেমে তিনি অবরোধকারীদের সাথে কথা বলেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন অতিসত্বর তাঁদের দাবি পূরণ করা হবে কিন্তু তারপরও স্থানীয়রা পথ অবরোধ প্রত্যাহার করেন নি। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠার আগেই সিনিয়র ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মহেন্দ্র চাকমা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তিনি বিক্ষোভকারীদের আশ্বস্ত করেন যে আগামী দুই দিনের মধ্যেই এসডিএম রিঙ্কু রিয়াং-এর বদলি কার্যকর করা হবে। এই আশ্বাসের ভিত্তিতে অবশেষে স্থানীয়রা পথ অবরোধ তুলে নেন। ওই আশ্বাসের ভিত্তিতে পথ অবরোধ প্রত্যাহার করেন এলাকাবাসী।

এবিষয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ৪৭ করমছড়ার বিধায়ক চিত্তরঞ্জন দেববর্মা বলেন, নিয়মানুযায়ী অফিসের কাজকর্মের জন্য এসডিএমের নির্দেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সরকারী কর্মচারীকে গালিগালাজ করা একদম ঠিক হয়নি। এবিষয়ে নিয়ে তিনি খোঁজখবর নিয়ে আলেচনা করবেন।

এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এক ক্লাব সদস্য জানিয়েছেন, মাত্র দুইদিন রয়েছে দূর্গাপুজা। এখন মহকুমা শাসক রিঙ্কু রিয়াং নির্দেশ দিয়েছেন দূূর্গাপূজার প্যান্ডেল সঠিকভাবে নির্মাণ করা হয়েছে কিনা তারজন্য এক ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে পরীক্ষা করানো হোক। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কেনো ইঞ্জিনিয়ার পাওয়া যায়নি। যারফলে দূর্গাপুজা প্যান্ডেল অর্ধসমাপ্ত হয়ে রয়েছে। তাছাড়া, তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ করে বলেন, বিশ্বকর্মা পুজা দিন তাঁকে প্রসাদ দেওয়া হলে তা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন তিনি। এমনকি, কিছুদিন আগে তহশিলদারদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন তিনি। কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে একজন তহশিলদার বাইক নষ্ট হয়ে যায়। ফলে তিনি বাইক রেখে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এসডিএম ওসিকে ঢেকে নিয়ে বাইক আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তাঁদের দাবি, অতিসত্বর এসডিএমকে বদলি করা হোক। যতক্ষণ না পর্যন্ত তাঁকে বদলি করা হবে ততক্ষণ পথ অবরোধ চলতে থাকবে।

এবিষয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসডিএম রিঙ্কু রিয়াং বলেন, পূর্বে থেকেই
পুর পরিষদের কৃপাময় দেব অসুস্থ ছিলেন। তিনি চারমাস পর অবসরে যাবেন। আজকের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তিনি অসুস্থ হয়েছেন কিনা তার জানা নেই। তাঁর কথায়, পূর্বে এসডিএমরা একটা পরিবেশ তৈরী করে গিয়েছিলেন যার কারণে তিনি দূর্ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছে।