গ্রেটার নয়ডা, ২৫ সেপ্টেম্বর — প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, ভারতের উন্নয়ন মডেল ‘অন্ত্যোদয়া’র ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে, যার মূল লক্ষ্য হলো সমাজের শেষ সারির, সবচেয়ে দরিদ্র মানুষটির উন্নয়ন নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, “অন্ত্যোদয়া মানে হলো সর্বশেষ ব্যক্তির কল্যাণ। উন্নয়নের সুফল কেবল শহরের বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, তা পৌঁছবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা চায়ের দোকানদার, ফেরিওয়ালা, ছোট ব্যবসায়ীর কাছেও।”
প্রধানমন্ত্রী দেশের ফিনটেক খাতের উন্নয়ন ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রসারকে অন্ত্যোদয়ার বাস্তব প্রয়োগ হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “ইউপিআই, আধার, ডিজিলকার, ওএনডিসি-এর মতো ওপেন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো ‘প্লাটফর্মস ফর অল, প্রগ্রেস ফর অল’ নীতির বাস্তব রূপ। একসময় যেখানে কেবল বড় সংস্থাই আনুষ্ঠানিক ঋণের সুবিধা পেত, আজ প্রধানমন্ত্রী স্বনিধি যোজনার মাধ্যমে রাস্তায় ব্যবসা করা মানুষজনও ঋণের আওতায় আসছেন।”
সরকারি কেনাকাটার ক্ষেত্রে পরিবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি গভর্নমেন্ট ই-মার্কেটপ্লেস -এর উল্লেখ করেন এবং বলেন, “আগে কেবল বড় সংস্থাগুলিই সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারত। এখন প্রায় ২৫ লক্ষ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও দোকানদার জিইএম প্ল্যাটফর্মে যুক্ত। এ পর্যন্ত ১৫ লক্ষ কোটি টাকার পণ্য ও সেবা কেনা হয়েছে, যার মধ্যে ৭ লক্ষ কোটি এসেছে এমএসএমই ও ছোট শিল্পদের কাছ থেকে।”
পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মজয়ন্তীতে তাঁর অন্ত্যোদয়ার দর্শনের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই দর্শনই আমাদের উন্নয়নের ভিত্তি। আজ এক প্রান্তের ছোট দোকানদারও সরকারি ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশজুড়ে পণ্য সরবরাহ করছেন। এটিই সুশাসন ও অন্ত্যোদয়ার নিদর্শন।”
বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতার মধ্যেও ভারতের স্থিতিশীল উন্নয়ন নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করে মোদি বলেন, “বিপর্যয় আমাদের দিক পরিবর্তন করে না, বরং নতুন দিশা দেখায়। আমরা আগামী দশকের জন্য একটি শক্ত ভিত গড়ে তুলছি।” তিনি আত্মনির্ভর ভারতের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “অন্যের ওপর নির্ভরতা সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। যে পণ্য ভারতে তৈরি করা সম্ভব, তা ভারতেই তৈরি হতে হবে।”
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানান, যেন তারা এমন ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করেন যা দেশকে আত্মনির্ভর করে তুলবে। তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যেই ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে ৪০,০০০-এরও বেশি অপ্রয়োজনীয় বিধিনিষেধ তুলে দিয়েছে ও বহু আইন থেকে দণ্ডের ব্যবস্থা সরিয়ে ফেলেছে।
পণ্যের মান নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আজ প্রতিটি ভারতীয় ‘এটা স্বদেশি’—এই কথা গর্ব করে বলছে। তাই আমাদের প্রতিটি পণ্যের গুণমান আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে।”
এবারের বাণিজ্য মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২,২০০-রও বেশি প্রদর্শক অংশগ্রহণ করছেন। রাশিয়া এবারের আসরে অংশীদার দেশ হিসেবে যুক্ত হয়েছে, যা মেলার আন্তর্জাতিক গুরুত্ব আরও বাড়িয়েছে।

