ভারতের একাধিক রাজ্যে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস, দুর্গাপুজোয় দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির আশঙ্কা; তামিলনাড়ুর পাহাড়ি জেলায় মেঘভাঙা বৃষ্টির সতর্কতা

কলকাতা, ২৫ সেপ্টেম্বর : ভারতীয় আবহাওয়া দফতর বৃহস্পতিবার একাধিক রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছে। তামিলনাড়ুর পাহাড়ি জেলা কোয়েম্বাটুর ও নীলগিরির জন্য আগামী তিনদিনের জন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ওই এলাকাগুলিতে মেঘভাঙা বৃষ্টির আশঙ্কা থাকায় স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং নদী ও পাহাড়ি ঢালে বসবাসকারী বাসিন্দাদের সাবধানতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের মতে, বঙ্গোপসাগরের উপর তৈরি হওয়া একটি চক্রবাতী ঘূর্ণাবর্ত এবং নতুন নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনার কারণে এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মিয়ানমারের উপকূলবর্তী অঞ্চলে ঘূর্ণাবর্ত সক্রিয় রয়েছে এবং আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ আরও ঘনীভূত হয়ে দক্ষিণ তামিলনাড়ু ও কেরলের বৃষ্টির ধরনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে পূর্বাভাস।

গত ২৪ ঘণ্টায় সেলম জেলার ইয়েরকোডে সর্বোচ্চ ৫ সেমি বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও কোয়েম্বাটুর জেলার চিন্নাকল্লার ও ভালপারাই, কান্যকুমারীর পলামোর, তিরুনেলভেলির নালুমুক্কু ও ওট্টু এলাকায় ২ সেমি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।আইএমডি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার তামিলনাড়ু, পুদুচ্চেরি ও কারাইকালের বিভিন্ন স্থানে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। মৎস্যজীবীদের দক্ষিণ-পশ্চিম ও মধ্য বঙ্গোপসাগরে যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে কারণ সমুদ্রের পরিস্থিতি প্রতিকূল এবং দমকা হাওয়ার গতি বাড়তে পারে।

এদিকে, আইএমডি বিদর্ভ ও ছত্তিশগড়ের জন্য আজ অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করেছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, ওড়িশা, তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র, মারাঠাওয়াড়া, কেরল, গোয়া, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তর-পূর্ব ভারত এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জেও ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। আগামী ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কনকন ও মধ্য মহারাষ্ট্রের ঘাট এলাকায় ২১ সেমি বা তার বেশি ‘এক্সট্রিম হেভি রেইনফল’ বা অত্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে এবং স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

জাতীয় রাজধানী দিল্লি ও আশপাশের অঞ্চলে আবহাওয়া স্থিতিশীল থাকবে বলে জানানো হয়েছে। ২৫–২৬ সেপ্টেম্বর আবহাওয়া পরিষ্কার থাকবে এবং তাপমাত্রা ৩৩°C থেকে ৩৬°C এর মধ্যে থাকবে। ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর আকাশ আংশিক মেঘাচ্ছন্ন হতে পারে এবং উত্তর-পূর্ব দিক থেকে হালকা বাতাস বইবে। উত্তর-পশ্চিম ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর বিস্তার ক্রমে সঙ্কুচিত হচ্ছে, এবং আগামী কয়েকদিনে রাজস্থান, গুজরাত, হিমাচল প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের কিছু অংশ থেকে মৌসুমী বায়ু সম্পূর্ণভাবে বিদায় নিতে পারে বলে জানিয়েছে আইএমডি।

অন্যদিকে, কলকাতা সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গে আগামী কয়েকদিন দুর্গাপুজোর আবহাওয়াকে ঘিরে কিছুটা দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। কলকাতা আজ (২৫ সেপ্টেম্বর) মেঘলা আকাশের নিচে দিন শুরু করেছে। তাপমাত্রা থাকবে ২৬°C থেকে ৩১°C এর মধ্যে এবং সারাদিন হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বাতাসে আর্দ্রতা ৭৯ শতাংশ এবং দৃষ্টিসীমা কমে ৮ কিলোমিটার হয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, দক্ষিণবঙ্গের কিছু জেলায় আজ ও আগামীকাল বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হতে পারে এবং ঘণ্টায় ৩০–৪০ কিমি বেগে দমকা হাওয়া বইতে পারে।

দুর্গাপুজো উপলক্ষে আইএমডি একটি বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করেছে যেখানে ২৬ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রাক-পুজোর সময় আকাশ মেঘলা থাকবে এবং অনেক স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিও হতে পারে। মূল পুজোর দিনগুলি অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্তও বৃষ্টিপাতের ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী থেকে মেঘলা আকাশ ও বজ্রঝড়ের সম্ভাবনা প্রবল। বিশেষ করে ২৭ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। কলকাতায় সন্ধ্যার সময়ের ‘প্যান্ডেল হপিং’ কার্যক্রমে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

এছাড়াও, ২৫ সেপ্টেম্বর উত্তর-মধ্য বঙ্গোপসাগরের উপর আরও একটি নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ২৬ তারিখে ডিপ্রেশন বা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে এবং ২৭ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ ওড়িশা-উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সিস্টেমটির প্রভাবে ২৫–২৭ সেপ্টেম্বর দক্ষিণবঙ্গে আরও এক দফা বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে। আবহাওয়া দফতর পরামর্শ দিয়েছে, উপকূলবর্তী অঞ্চল ও ঘাট অঞ্চলগুলিতে পাহাড়ি ঢালের দিকে নজর রাখতে এবং মানুষকে পাহাড়ি অঞ্চলে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়ার এই পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে, সাধারণ মানুষকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যেন তারা সরকারি নির্দেশিকা, স্থানীয় প্রশাসনের সতর্কতা এবং আবহাওয়া দফতরের বুলেটিন নিয়মিত অনুসরণ করেন। আবহাওয়ার পরিবর্তনে দুর্গাপুজোর উৎসবে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে, তবে যথাযথ পরিকল্পনা ও সচেতনতা বজায় থাকলে বড় ধরনের সমস্যা এড়ানো সম্ভব।