গুয়াহাটি, ২৩ সেপ্টেম্বর: আসামের প্রখ্যাত গায়ক, অভিনেতা ও সংস্কৃতি-প্রেমী জুবিন গার্গের মরদেহ আজ কামারকুচিতে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাহ করা হয়। বেদ মন্ত্রোচ্চারণ, শঙ্খধ্বনি ও জয়ধ্বনির মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় শেষকৃত্য। স্ত্রী গরিমা শইকীয়া গার্গ অশ্রুসজল অবস্থায় উপস্থিত ছিলেন, যখন বোন পালমে বোড়ঠাকুর ও ঘনিষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক রাহুল গৌতম চিতায় অগ্নিসংযোগ করেন।
চিতার চারপাশে সাতবার পরিক্রমা করেন তাঁরা, পুরোহিতদের নির্দেশে সম্পন্ন হয় ধর্মীয় রীতিনীতি। উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ও কিরণ রিজিজু, যাঁরা চিতায় কাঠ অর্পণ করেন। ২০১৭ সালে নিজের জন্মদিনে রোপিত চন্দন গাছের একটি শাখা তাঁর চিতায় অর্পিত হয়, যা ছিল এক হৃদয়স্পর্শী বিদায়।
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গান স্যালুট ও বুগল বাজিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। জুবিন গার্গের জনপ্রিয় গান “মায়াবিনী রাতিৰ বুকু” গেয়ে তাঁকে শেষবারের মতো বিদায় জানায় ভক্তসমাজ।
জুবিন গার্গের মৃত্যুতে সিঙ্গাপুরের ডাক্তাররা মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘ডুবে যাওয়া’ বললেও, তার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে জনসাধারণ। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিয়ে উত্তাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও রাজনৈতিক মহল। জনচাপের মুখে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ঘোষণা দেন দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের।
সোমবার গভীর রাতে, শেষকৃত্যের ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে গৌহাটি মেডিকেল কলেজে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এই প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করেন এইমস গৌহাটির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল, যার উপস্থিতি নিশ্চিত করেন এসডিএম দিব্যা পাতে।
প্রয়াত শিল্পীর মৃত্যুকে ঘিরে একটি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ওঠে। জাতীয় নারী বাহিনী, যা রাইজর দলের সঙ্গে যুক্ত, বঙাইগাঁও থানায় দায়ের করে একটি এফআইআর। এতে অভিযুক্ত করা হয় উত্তর-পূর্ব ভারত উৎসবের আয়োজক শ্যামকানু মহন্ত, ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা, সঞ্জীব নারাইন ও ড্রামার শেখর জ্যোতি গোস্বামীকে।
জুবিনের স্ত্রী গরিমা জানান, তিনি স্কুবা ডাইভিংয়ে ছিলেন না, বরং লাইফ জ্যাকেট পরে প্রথমবার সাঁতারের পর দ্বিতীয়বার সাঁতার কাটতে গিয়ে সিজার হয়। পরে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে দুপুর ২:৩০ মিনিটে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, “একটি নিরপেক্ষ দেশে – যেখানে চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ আছে – সেখানে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পরেও দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রয়োজন ছিল না। তবে কোনো রাজনৈতিক অপব্যাখ্যা বা গুজব যাতে না ছড়ায়, সেই কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
জুবিন গার্গ শুধু একজন শিল্পী নন, তিনি ছিলেন আসামের সংস্কৃতি ও চেতনার প্রতীক। তাঁর মৃত্যুতে সারা উত্তর-পূর্বে শোকের ছায়া। এখন গোটা রাজ্য তাকিয়ে আছে তদন্তের ফলাফলের দিকে – কীভাবে মৃত্যু ঘটল এই কালজয়ী গায়কের?

