“ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ হলে পাকিস্তানকে রক্ষা করবে সৌদি আরব” — জানালেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ

নয়াদিল্লি, ২০ সেপ্টেম্বর: পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে একটি নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের পর উত্তপ্ত বিতর্ক শুরু হয়েছে দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ঘোষণা করেছেন, ভারত যদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, তবে সৌদি আরব পাকিস্তানের পক্ষে সামরিকভাবে রুখে দাঁড়াবে। ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আসিফ বলেন, এই চুক্তির আওতায় সৌদি আরব ও পাকিস্তান পরস্পরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং একে অপরের ওপর আক্রমণকে নিজেদের ওপর হামলা হিসেবে বিবেচনা করবে।

তিনি জিও টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “হ্যাঁ, একদম স্পষ্টভাবে বলছি… এতে কোনো সন্দেহ নেই।” আসিফ ন্যাটোর ‘Article 5’-এর সঙ্গে এই চুক্তির তুলনা করে বলেন, “এটি একটি প্রতিরক্ষামূলক চুক্তি, আক্রমণাত্মক নয়। যদি পাকিস্তান বা সৌদি আরবের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হয়, আমরা যৌথভাবে প্রতিরক্ষা করব।”

এই চুক্তির সবচেয়ে বিতর্কিত দিক হলো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রসঙ্গ। খাজা আসিফ নিশ্চিত করেন যে, প্রয়োজনে পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা সৌদি আরবের জন্য ‘উপলব্ধ’ থাকবে। যদিও পাকিস্তানের সরকারি নীতিমতে, এসব অস্ত্র কেবল ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কখনও কোনো আন্তর্জাতিক নিয়ম ভঙ্গ করেনি এবং নিয়মিত পরিদর্শনের সুযোগ দিয়েছে।

সৌদি আরবের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, “এই চুক্তি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিরক্ষামূলক কাঠামো, যা সবধরনের সামরিক উপাদানকে অন্তর্ভুক্ত করে।” চুক্তিটি পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সাম্প্রতিক রিয়াধ সফরের সময় সই হয়।

চুক্তির মূল বক্তব্য অনুযায়ী, “যেকোনো একটির বিরুদ্ধে আক্রমণ মানেই উভয়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ।” এই ঘোষণা ভারতের দিক থেকেও প্রতিক্রিয়া টেনেছে। নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি দুই দেশের দীর্ঘদিনের সম্পর্ককে আনুষ্ঠানিকতা দিয়েছে এবং এর কূটনৈতিক ও সামরিক দিকগুলি পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তির ফলে পাকিস্তানের পারমাণবিক ক্ষমতা এবং সৌদি আরবের বিপুল অর্থশক্তির মধ্যে এক নতুন কৌশলগত মেলবন্ধন তৈরি হলো। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল এবং ইরানের কৌশলগত হিসাবও বদলে যেতে পারে।

এদিকে, একটি সম্ভাব্য ‘আরব প্রতিরক্ষা জোট’ গঠনের প্রশ্নে খাজা আসিফ বলেন, “দরজা বন্ধ নয়। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না, তবে এই অঞ্চলের মুসলিম জনগোষ্ঠীর এটি মৌলিক অধিকার—একসঙ্গে নিজেদের রক্ষা করা।”

এই চুক্তিকে ঘিরে দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার ইঙ্গিত মিলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।