উত্তরাখণ্ডের চামোলিতে ভয়াবহ ক্লাউডবার্স্ট, নিখোঁজ ১০, উদ্ধার তৎপরতা জোরদার

চামোলি, ১৮ সেপ্টেম্বর : উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার নন্দানগর এলাকায় বুধবার গভীর রাতে প্রবল বর্ষণের ফলে ঘটে যাওয়া ক্লাউডবার্স্টে অন্তত ১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন এবং বেশ কয়েকটি বাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। রাজ্য দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী ও স্থানীয় পুলিশের যৌথ উদ্যোগে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়েছে। দুর্গত এলাকায় এখনো মাটির নিচে বহু মানুষ আটকে থাকার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। এ পর্যন্ত দুই নারী ও এক শিশুকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নন্দানগরের কুনতরি লাগা ফালি এবং ধুরমা গ্রাম। প্রবল বৃষ্টিপাতে ছয়টি বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। কুনতরি লাগা ফালি থেকে নিখোঁজ ৮ জনের মধ্যে রয়েছেন কুনওয়ার সিং (৪২), তার স্ত্রী কান্তা দেবী (৩৮), দুই পুত্র বিকাশ ও বিশাল (দুজনেরই বয়স ১০), নরেন্দ্র সিং (৪০), জগদম্বা প্রসাদ (৭০), ভাগা দেবী (৬), ও দেবেশ্বরী দেবী (৬৫)। ধুরমা গ্রাম থেকে নিখোঁজ রয়েছেন গুমান সিং (৭৫) এবং মমতা দেবী (৩৮)।

ঘটনার পরপরই এসডিআরএফ-এর একটি দল সাব-ইন্সপেক্টর জগমোহনের নেতৃত্বে গোচার পোস্ট থেকে রওনা দেয়। তবে প্রবল বৃষ্টির কারণে রাস্তা বন্ধ থাকায়, দলটিকে প্রায় ৮ কিমি দুর্গম পাহাড়ি পথ পায়ে হেঁটে পার হয়ে দুর্গত এলাকায় পৌঁছাতে হয়। সেখানে পৌঁছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। এসডিআরএফ ছাড়াও, জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী, জেলা প্রশাসন, জেলা দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী এবং জনপদ উন্নয়ন বিভাগ-এর কর্মীরা উদ্ধার ও ত্রাণকাজে নিযুক্ত রয়েছে। ধ্বংসস্তূপ সরাতে জেসিবি মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে এবং চিকিৎসা সহায়তার জন্য তিনটি অ্যাম্বুল্যান্সসহ মেডিকেল টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে।

এদিকে, উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী ঘটনার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং জানিয়েছেন, তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন ও প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। অপরদিকে, ভারতের আবহাওয়া দফতর চামোলিসহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় আগামী কয়েকদিন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। চামোলি, দেরাদুন, তেহরি গঢ়ওয়াল, পিথোরাগড়, উদম সিং নগর, চম্পাওয়াত ও পাউরি গঢ়ওয়াল জেলাগুলির বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

এই দুর্যোগ চামোলিতে নতুন হলেও রাজ্যজুড়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেন নিত্যদিনের চিত্র হয়ে উঠেছে। এর আগে দেরাদুনের সাহস্ত্রধারা এলাকায় একটি ভয়াবহ ক্লাউডবার্স্টে ১৩ জনের মৃত্যু ঘটে এবং টমসা (টনস) নদীর জলস্ফীতি তপকেশ্বর মন্দিরসহ আশপাশের এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। মঙ্গলবার রাতেও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ভারী বৃষ্টির ফলে ১৫ জনের মৃত্যু, ১৬ জন নিখোঁজ ও প্রায় ৯০০ জন আটকে পড়ার খবর পাওয়া যায়।

বর্তমানে চামোলি জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এসডিআরএফ ও এনডিআরএফ-এর দল এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে। তবে অবিরাম বৃষ্টি ও পাহাড়ি এলাকার জটিল ভৌগোলিক অবস্থান উদ্ধার কাজকে ব্যাহত করছে। প্রশাসন আশঙ্কা করছে ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও কেউ আটকে থাকতে পারেন। জেলা কন্ট্রোল রুম থেকে নজরদারি চালানো হচ্ছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।