বিশ্বকর্মা যোজনায় রূপান্তরের ছোঁয়া, দুই বছরে উপকৃত ৩০ লক্ষের বেশি কারিগর

নয়াদিল্লি, ১৭ সেপ্টেম্বর: গত দুই বছরে ঐতিহ্যবাহী পেশার সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৩০ লক্ষ শিল্পী ও কারিগর ‘প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা’-র আওতায় নথিভুক্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৬ লক্ষ উপভোক্তার দক্ষতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৮৬ শতাংশ ইতিমধ্যেই প্রাথমিক প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করেছেন। সবচেয়ে বেশি নিবন্ধিত পেশা ‘রাজমিস্ত্রি’ বা গৃহনির্মাণ কর্মী। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এখনও পর্যন্ত ৪.৭ লক্ষের বেশি ঋণ অনুমোদিত হয়েছে, যার মোট মূল্য ৪১,১৮৮ কোটি টাকা—এই ঋণগুলো মূলত ব্যবসার সম্প্রসারণে সহায়তা করার জন্য মঞ্জুর করা হয়েছে।

২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা দিবস উপলক্ষে চালু হওয়া এই যোজনার লক্ষ্য হল দেশের ঐতিহ্যবাহী শিল্পীদের স্বীকৃতি প্রদান, আধুনিক যন্ত্র সরবরাহ, দক্ষতা উন্নয়ন এবং বাজার সংযোগের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়ন।১৩,০০০ কোটি টাকার আর্থিক বরাদ্দে ২০২৩-২৪ থেকে ২০২৭-২৮ অর্থবছর পর্যন্ত কার্যকর এই যোজনাটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ মন্ত্রক, দক্ষতা উন্নয়ন ও উদ্যোক্তা মন্ত্রক, এবং আর্থিক পরিষেবা বিভাগ, অর্থ মন্ত্রক।

এই প্রকল্পের আওতায় শিল্পীদের একটি বিশ্বকর্মা সার্টিফিকেট ও পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়, প্রশিক্ষণকালীন দিনে ৫০০ হারে স্টাইপেন্ড দেওয়া হয় এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ১৫,০০০ পর্যন্ত টুলকিট ই-ভাউচার ইস্যু করা হয়। সরকার জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ২৩ লক্ষের বেশি ই-ভাউচার বিতরণ করা হয়েছে। ঋণ সুবিধাগুলিও জামানতবিহীন এবং কম সুদে দুই ধাপে প্রদান করা হয়। এছাড়াও, বাজার সংযোগ, ডিজিটাল লেনদেনে প্রণোদনা, এবং ব্র্যান্ডিং-সাপোর্টের সুবিধাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

দেশজুড়ে এই প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য ৪৯৭টি জেলায় ৬১৮টি জেলা প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিট গঠিত হয়েছে, যারা প্রশিক্ষণের সময়সূচি নির্ধারণ, সচেতনতা তৈরি, অংশীদারদের সমন্বয় এবং প্রশিক্ষণ নির্দেশিকাগুলির প্রতি নজরদারি করছে। প্রকল্পটি শহর ও গ্রামীণ উভয় স্তরে সমানভাবে বিস্তৃত হয়েছে—রাজমিস্ত্রি, দর্জি, কুমার, কাঠমিস্ত্রি, ধোপা, চর্মশিল্পী, প্রভৃতি বহু প্রথাগত পেশার মানুষ এর আওতায় এসেছেন।

বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে মহিলাদের, তফসিলি জাতি ও উপজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি, প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গ এবং উত্তর-পূর্ব, দ্বীপাঞ্চল ও পার্বত্য অঞ্চলের শিল্পীদের ক্ষমতায়নের ওপর। প্রকল্পটি একটি বিস্তৃত ছাতার নিচে ছোট কারিগরদের একত্রিত করে, একদিকে যেমন তাঁদের ঐতিহ্যবাহী কৌশল সংরক্ষণের চেষ্টা করছে, অন্যদিকে তাঁদের আধুনিক বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করে টেকসই জীবিকা গড়ে তুলতে সহায়তা করছে।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে কারিগররা সামাজিক স্বীকৃতি পাচ্ছেন, উন্নত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম ব্যবহারে উৎপাদনশীলতা বাড়াচ্ছেন, এবং নতুন বাজারে প্রবেশ করতে পারছেন। সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ায় তাঁরা আর অসংগঠিত ও উচ্চসুদের ধারদেনার ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন না। সরকারের মতে, সঠিকভাবে রূপায়ণ হলে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা শুধু একটি প্রকল্প নয়, বরং ভারতীয় হস্তশিল্প ও ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক উদ্যোক্তাদের সংযুক্ত করে একটি মডেল হয়ে উঠতে পারে।