প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যপ্রদেশ সফর: স্বাস্থ্যের সাথে উন্নয়নের নতুন দিগন্তে যাত্রা

ধার, ১৬ সেপ্টেম্বর — প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বুধবার মধ্যপ্রদেশের ধার জেলায় এক বিশাল জনসভায় অংশগ্রহণ করবেন এবং একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচির সূচনা করবেন। এই সফরকে কেন্দ্র করে গোটা রাজ্যে তৈরি হয়েছে এক উৎসবমুখর পরিবেশ, কারণ এটি শুধু রাজনৈতিক দিক থেকেই নয়, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও একাধিক মাইলফলক স্থাপন করতে চলেছে। এই কর্মসূচিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল ‘স্বাস্থ্য নারী, সশক্ত পরিবার’ জাতীয় স্বাস্থ্য অভিযান, যা আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত দেশজুড়ে আয়োজিত হবে। আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির, কমিউনিটি হেলথ সেন্টার এবং সরকারি হাসপাতালগুলিতে প্রায় এক লক্ষেরও বেশি হেলথ ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে, যা মহিলাদের ও শিশুদের জন্য দেশের ইতিহাসে বৃহত্তম স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এই ক্যাম্পের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাবে প্রতিরোধমূলক, উন্নয়নমূলক ও চিকিৎসামূলক স্বাস্থ্যসেবা। স্ক্রিনিং করা হবে অ-সংক্রামক রোগ, রক্তস্বল্পতা, যক্ষা এবং সিকল সেল রোগের; পাশাপাশি মাতৃত্বকালীন যত্ন, শিশুর টিকাকরণ, পুষ্টি, ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো হবে। বিশেষজ্ঞ পরিষেবার আওতায় থাকছে গাইনিকোলজি, শিশু চিকিৎসা, চোখ, কান, চর্মরোগ, মনোরোগ ও দাঁতের চিকিৎসা। বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা হাসপাতাল থেকে ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আসা হবে এই ক্যাম্পগুলিতে। দেশব্যাপী আয়োজন করা হবে রক্তদান শিবির, যেখানে রক্তদাতাদের নাম নথিভুক্ত করা হবে ই-রক্তকোষ পোর্টালে। পাশাপাশি উপভোক্তাদের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করার ব্যবস্থাও থাকবে, থাকবে অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য হেল্পডেস্ক এবং পুষ্টি ও জীবনধারা-ভিত্তিক অসুখ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলার বিভিন্ন কার্যক্রম।

প্রধানমন্ত্রী মোদী এদিন প্রায় ১০ লক্ষ গর্ভবতী মহিলার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি আর্থিক সাহায্য প্রদান করবেন ‘প্রধানমন্ত্রী মাতৃ বন্দনা যোজনার’ আওতায়, যা মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের এক বড় পদক্ষেপ। এছাড়া তিনি উদ্বোধন করবেন ‘সুমন সখী’ নামে একটি চ্যাটবট, যা গ্রামীণ এলাকায় মা ও শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়াবে সহজ ভাষায় তথ্য দিয়ে। সিকল সেল রোগ নির্মূলেও বড় অগ্রগতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী এই দিনে বিতরণ করবেন দেশের এক কোটিতম ‘সিকল সেল স্ক্রিনিং ও কাউন্সেলিং কার্ড’। এটি বিশেষ করে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে এই রোগ প্রতিরোধে সরকারের একটি দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী মোদী চালু করবেন ‘আদি কর্মযোগী অভিযান’-এর আওতায় ‘আদি সেবা পর্ব’ নামের একটি বিশেষ ক্যাম্পেইন, যার মাধ্যমে উপজাতি এলাকায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি, দক্ষতা উন্নয়ন, স্যানিটেশন, জল সংরক্ষণ এবং জীবিকাভিত্তিক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এই অভিযানের অংশ হিসেবে গৃহীত হবে ‘ট্রাইবাল ভিলেজ অ্যাকশন প্ল্যান’ এবং ‘ভিশন ২০৩০’, যার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে উপজাতি গ্রামগুলোর উন্নয়নের রোডম্যাপ। এতে করে দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে দেশের এক বড় জনগোষ্ঠী।

এই সফরের আরেকটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হল ধার জেলার হিংওনিয়া গ্রামে পিএম মিত্রা টেক্সটাইল পার্কের উদ্বোধন। এই বিশাল প্রকল্পটি ২,১৫০ একর জমির উপর তৈরি হচ্ছে, যার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে সরকারের ‘ফার্ম থেকে ফাইবার, ফাইবার থেকে ফ্যাক্টরি, ফ্যাক্টরি থেকে ফ্যাশন, এবং ফ্যাশন থেকে বিদেশী’ ভিশন। প্রায় ২৩,১৪০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব ইতিমধ্যে এসেছে এই পার্কের জন্য, যার ফলে সৃষ্ট হবে প্রায় ৩ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান। এতে করে একদিকে যেমন দেশের টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়বে, অন্যদিকে মধ্যপ্রদেশের তুলা চাষিদের আয়ও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।

সবশেষে, প্রধানমন্ত্রী মোদী মধ্যপ্রদেশ সরকারের ‘এক বাগিয়া মা কে নাম’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে একটি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যকে একটি চারা গাছ উপহার দেবেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের ১০,০০০-এরও বেশি মহিলা তাঁদের নিজ নিজ এলাকায় কমিউনিটি গার্ডেন গড়ে তুলবেন, যা একদিকে পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখবে, অন্যদিকে নারীদের আর্থিক ও সামাজিক স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করবে।

সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সফর শুধুমাত্র মধ্যপ্রদেশের জন্য নয়, গোটা দেশের জন্য এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছে। নারী ও শিশু স্বাস্থ্য, উপজাতি জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন এবং শিল্পায়নের মাধ্যমে আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্নপূরণের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবেই দেখা হচ্ছে এই বহুমাত্রিক উদ্যোগকে।