সিওয়ান, ১৬ সেপ্টেম্বর : বিহারে সরকার যেখানে রাজ্যজুড়ে কঠোরভাবে পূর্ণ মদবন্দি (শরাববন্দি) কার্যকর করার দাবি করে চলেছে, সেখানে সোমবার সন্ধ্যায় সিওয়ান জেলার এক ঘটনায় সেই দাবি একপ্রকার ধুলিসাৎ হয়ে যায়। সিওয়ান-মাইরোয়া প্রধান সড়কের পাশের জামসিকরি গ্রামের কাছে মদ বোঝাই একটি স্কর্পিও গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ধারে গর্তে পড়ে যায়। এরপর যা ঘটল, তা শুধু মদবন্দি আইন নয়, গোটা পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিল।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গাড়ি পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আশপাশের গ্রামবাসী ও পথচারীরা সেখানে জড়ো হয়ে যান। যখন জানা যায় যে গাড়িটির ভিতরে বিপুল পরিমাণ মদ রয়েছে, তখন মুহূর্তের মধ্যেই গোটা এলাকা মদের লুটের উৎসবে পরিণত হয়। লোকজন গাড়ির কাঁচ ভেঙে গর্তে নেমে বোতল বোতল মদ বের করতে শুরু করে। কেউ ব্যাগে ভরে নিয়ে যাচ্ছে, কেউ আবার সরাসরি সঙ্গীদের হাতে মদের বোতল তুলে দিচ্ছে। এমনকি, কেউ টোকরি ও বস্তা নিয়ে এসে সেগুলোতে বোতল বোতল মদ ভরছে।
সবচেয়ে চমকপ্রদ দৃশ্য ছিল পাশের একটি বাড়ির ছাদে দাঁড়ানো অসংখ্য মহিলার, যারা গোটা দৃশ্য উপভোগ করছিলেন নির্ভারভাবে। রাস্তার ধারে এতটাই ভিড় জমে যায় যে এলাকার পরিবেশ একপ্রকার মেলার রূপ নেয়। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলা এই বেপরোয়া লুটপাটের সময় পুলিশ প্রশাসনের কোনো প্রতিনিধিত্ব ছিল না। এই সুযোগে স্কর্পিওর চালকও ভিড়ের ফাঁদ গলে পালিয়ে যায়। পুলিশের পৌঁছানোর আগেই গাড়িটি পুরোপুরি খালি হয়ে যায়। একটিও মদের বোতল বাকি থাকেনি।
মুফাসসিল থানার ওসি অশোক কুমার দাস ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে দেরিতে পৌঁছায় কারণ খবর দেরিতে পাওয়া যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর সময় গাড়িটি খালি ছিল। পরে গাড়িটিকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিহারে ২০১৬ সালের এপ্রিল মাস থেকে পূর্ণ মদবন্দি আইন কার্যকর হয়েছে এবং সরকার বারবার দাবি করে এসেছে যে এই আইন কঠোরভাবে বলবৎ রয়েছে। কিন্তু সিওয়ানের এই ঘটনা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে দিয়েছে যে এখনও রাজ্যে মদের পাচার ও সরবরাহ চালু রয়েছে এবং প্রশাসনের নজরদারি তাতে প্রায় নেই বললেই চলে।
স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করছেন, পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া এত বড় মদের চালান জেলায় প্রবেশ করা সম্ভব নয়। প্রায় প্রতিদিনই সিওয়ান ও তার আশেপাশের এলাকায় মদ উদ্ধার ও গ্রেপ্তারির ঘটনা সামনে আসে, কিন্তু প্রকাশ্যে এমন লুটপাট প্রথমবার ঘটল, যা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে আঙুল তুলছে।
ঘটনার যে দিকটি সবচেয়ে উদ্বেগজনক তা হলো, মদবন্দি আইনের কার্যকারিতাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষ প্রকাশ্যে মদ লুট করলো, তাও বিন্দুমাত্র ভয় বা আইন ভঙ্গের আশঙ্কা ছাড়াই। এই চিত্র প্রমাণ করে দিচ্ছে যে রাজ্যের মদবন্দি আইন এখন সাধারণের চোখে একপ্রকার মজার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পুলিশের দেরিতে উপস্থিতির কারণে স্থানীয়দের অভিযোগ, আইন প্রয়োগে প্রশাসনের আগ্রহ নেই। শুধুমাত্র কাগজে-কলমে মদবন্দি চালু আছে, বাস্তবে তা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেল যে সরকার যেখানে মদবন্দিকে নিজেদের অন্যতম সাফল্য হিসেবে তুলে ধরছে, বাস্তব পরিস্থিতি তার ঠিক বিপরীত। প্রশ্ন উঠছে, যখন এত সংখ্যক মানুষ প্রকাশ্যে মদ লুট করছিল, তখন পুলিশ কোথায় ছিল? প্রশাসনের কি কোনও গোয়েন্দা তথ্য ছিল না? আবার প্রশ্ন উঠছে, এই মদবন্দি আইনের আসল সুবিধা পাচ্ছে কারা? অবৈধ পাচারকারীরা, না স্থানীয় প্রশাসনের কিছু অংশ?
সিওয়ানের জামসিকরি গ্রামে ঘটনার পর থেকে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে। প্রশাসনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও কার্যকারিতা নিয়ে উঠেছে বড় প্রশ্ন। সরকার যেখানে মদবন্দিকে বিহারের উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরতে চায়, সেখানে এমন ঘটনা দেখিয়ে দিচ্ছে, রাজ্যের গভীরে প্রশাসনিক শৈথিল্য কতটা প্রকট।

