নয়াদিল্লি, ১৫ সেপ্টেম্বর: গত এক দশকে উত্তর-পূর্ব ভারত শুধু ভারতের ভৌগোলিক প্রান্তসীমা নয়, বরং জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির আওতায়, “ইস্ট” শব্দটি এখন শুধুমাত্র একটি দিক নির্দেশ নয়, বরং ক্ষমতায়ন, আইন প্রয়োগ, শক্তিশালীকরণ এবং রূপান্তর —এই চারটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়ানো একটি দৃষ্টিভঙ্গি। সেই ভাবনারই বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে অব্যাহত অবকাঠামোগত উন্নয়নে। রেল, সড়ক ও গ্রামীণ পরিকাঠামোর বিস্তারে সমন্বিতভাবে কাজ করছে রেল মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রক এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রক। প্রধান প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনা, প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন উদ্যোগ এবং উত্তর-পূর্ব বিশেষ পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প।
রেল পরিবহনে, ২০১৪ সাল থেকে ৬২,৪৭৭ কোটি বিনিয়োগ করা হয়েছে উত্তর-পূর্বে, যার মধ্যে ১০,৪৪০ কোটি বরাদ্দ হয়েছে চলতি অর্থবর্ষেই। বর্তমানে ৭৭,০০০ কোটিরও বেশি মূল্যের প্রকল্প কাজ চলছে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য মিজোরামের বৈরাবি-সাইরাং রেল প্রকল্প, যার মাধ্যমে আইজল প্রথমবারের মতো ভারতের জাতীয় রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতে চলেছে। প্রকল্পটির খরচ ৮,০০০ কোটিরও বেশি এবং এতে নির্মিত হয়েছে ১৪৩টি সেতু ও ৪৫টি সুড়ঙ্গ, যা দুর্গম ভৌগোলিক চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করে আধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর নিদর্শন গড়ে তুলেছে।
সড়ক পরিবহনেও বিপুল অগ্রগতি হয়েছে। পিএমজিএসওয়াই-এর আওতায় ৮৯,৪৩৬ কিমি রাস্তা ও ২,৩৯৮টি সেতু অনুমোদিত হয়েছে, যার মধ্যে ৮০,৯৩৩ কিমি রাস্তা ও ২,১০৮টি সেতুর কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ১৬,২০৭ কিমি জাতীয় সড়ক নির্মিত হয়েছে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত, যা রাজ্য রাজধানী, সীমান্তবর্তী এলাকা ও বাজার অঞ্চলগুলিকে একে অপরের সঙ্গে আরও দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত করেছে।
পরিকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক ও সেবাধর্মী ক্ষেত্রেও অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। নেসিডস-ওট্রি প্রকল্পের আওতায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শক্তি, জল, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও টেলিকম খাতে ২৯টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে এবং ৩১ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত ৪৬২.২১ কোটি ব্যয় করা হয়েছে। পিএম-ডিভাইন প্রকল্প, যা সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্র সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত, উত্তর-পূর্বের নির্দিষ্ট চাহিদা অনুসারে বহুস্তরীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করছে।
এই উন্নয়নের প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করতে চালু হয়েছে পূর্বোত্তর ভিকাs সেতু পোর্টাল, যার মাধ্যমে ডিজিটালি প্রকল্প প্রস্তাব, অনুমোদন, তহবিল বরাদ্দ ও অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে। এই উদ্যোগে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিজিটাল সংযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি হয়েছে। ভারতের ভারতনেট প্রকল্পের আওতায় উত্তর-পূর্বে ৬,৩৫৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে পরিষেবা-উপযোগী করা হয়েছে এবং ৩,২৯৭টি মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে, যা দূরবর্তী অঞ্চলে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিকরণে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
এই উন্নয়নের মূল লক্ষ্য শুধুমাত্র পরিকাঠামো গড়ে তোলা নয়, বরং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠা, যেখানে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও পানীয় জল, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও ডিজিটাল পরিষেবার সমান সুযোগ পান। প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘ভিকসিত ভারত ২০৪৭’ রূপকল্পের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রূপান্তর ভারতকে আরও দৃঢ়, সংযুক্ত এবং সমৃদ্ধ করে তুলছে—সকলের জন্য উন্নয়নের একটি বাস্তব দৃষ্টান্ত গড়ে তুলছে।

