জুলাই সনদে সইয়ে দ্বিধা জামায়াত-এনসিপি, বিএনপি এগোচ্ছে

জাকির হোসেন, ঢাকা, ১৩ সেপ্টেম্বর: বিএনপি জুলাই সনদে সই করতে প্রস্তুত হলেও জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও আরও কয়েকটি দল এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তাদের দাবি—সনদের স্পষ্ট আইনি কাঠামো না থাকলে এতে সই করলে কার্যকর ফল মিলবে না।

বিএনপি সূত্র জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাত সোয়া ন’টা অবধি বৈঠকে সইয়ের সিদ্ধান্ত হয়। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানোর কথা৷

বৃহস্পতিবার ঐকমত্য কমিশন দলগুলোর কাছে চূড়ান্ত সনদ পাঠিয়ে জানায়, এতে সবার মতামত প্রতিফলিত হয়েছে। রবিবার বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক হবে, প্রয়োজনে সোমবারও আলোচনা চলবে।

জামায়াত বৈঠক শেষে জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ পরামর্শ শেষে সিদ্ধান্ত হবে। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, “আলোচনা চলছে, শিগগির সিদ্ধান্ত নেব।”

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, “কমিশন যদি বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের ওপর দেয়, তাহলে বিষয়টি সংসদে গিয়ে আটকে যাবে। দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত হবে।”

ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন জানালেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আইনি নিশ্চয়তা ছাড়া তারা সই করবে না। কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স স্পষ্ট বলেছেন, আদালতে চ্যালেঞ্জ না করার ধারা থাকলে সিপিবি সই করবে না।
গণঅধিকার পরিষদ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে স্বীকৃতি না দেওয়ায় অসন্তুষ্ট। দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামান জানালেন, বিষয়টি বিবেচনায় আছে। বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব ও মৌলিক নীতির আপত্তি তুলেছে।

অন্যদিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সনদে সইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন নিশ্চিত করেছেন, সহ-সভাপতি তানিয়া রবকে প্রতিনিধি করা হবে।

ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সাংবিধানিক সংশোধনের বাইরে থাকা কিছু ধারা ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কার করতে পারে। সাংবিধানিক পরিবর্তনের বিষয়গুলো অগ্রাধিকারে দিতে হবে, নতুন বাংলাদেশ গড়তে সেগুলো অপরিহার্য।” কমিশনের মেয়াদ ১৫ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ৩০ সেপ্টেম্বর অবধি বাড়তে পারে।

এদিকে জামায়াত, এনসিপি ও আরও ছয়টি দল জুলাই সনদ বাস্তবায়ন-সহ চার দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের দাবি—সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে জাতীয় নির্বাচন, সবার জন্য সমান সুযোগ এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করা।

এই জোটে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (মামুনুল হকপন্থি), খেলাফত মজলিস (আবদুল বাছিত ও আহমদ আবদুল কাদেরপন্থি), গণঅধিকার পরিষদ (নূরুল হক নূর), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) এবং বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।

ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান জানিয়েছেন, সোমবার সংবাদ সম্মেলনে অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা হবে। খেলাফত মজলিস রোববারই জানাবে কর্মসূচি। এনসিপি নেতা আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “অভিন্ন দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের আলোচনাও চলছে, তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি।”

দলগুলির নেতারা জানাচ্ছেন, তারা ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন চান এবং সেই নির্বাচন জুলাই সনদের ভিত্তিতে হোক। তবে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি সংসদের এককক্ষে নাকি উভয় কক্ষে হবে, তা নিয়ে মতভেদ রয়ে গেছে।

প্রসঙ্গত, জুলাই সনদ মূলত গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে একটি ঐকমত্য দলিল, যেখানে নির্বাচনী সংস্কার, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ও অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা নির্ধারণসহ নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটি আগামী জাতীয় নির্বাচন ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারের জন্য রোডম্যাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।