ভারতকে ‘ক্ষমা চাইতে হবে’, ট্রাম্পের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কড়া বার্তা মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রীর

ওয়াশিংটন, ৬ সেপ্টেম্বর : আসন্ন মাস দুয়েকের মধ্যেই ভারতকে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে এবং ‘ক্ষমা চাইতে হবে’— এমনই মন্তব্য করলেন মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিক। শুক্রবার ব্লুমবার্গ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, ভারত শেষ পর্যন্ত প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির পথে হাঁটবেই।

লাটনিক বলেন, “ভারত রাশিয়া ও চীনের মাঝে ব্রিকস-এর ‘স্বরবর্ণ’। যদি ভারত সেই জোটেই থাকতে চায়, তবে থাকুক। কিন্তু আমেরিকার বাজারই বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাজার। ভারত যদি মার্কিন ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে না চায়, তবে ৫০% শুল্ক দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “অবশেষে সব দেশকেই আমেরিকার কাছে ফিরতে হয়, কারণ ক্রেতাই সব সময় সঠিক। আমাদের ৩০ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভোক্তা।”

লাটনিকের বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা আগে, ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লেখেন, “ভারত ও রাশিয়া এখন গভীরতম, অন্ধকার চীনের সঙ্গে চলে গিয়েছে। তাদের জন্য দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ কামনা করি।” এর সঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের একটি পুরনো ছবি শেয়ার করেন।

লাটনিক আরও দাবি করেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে যেখানে ভারত মাত্র ২% তেল কিনত রাশিয়া থেকে, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০%। মার্কিন পক্ষের অভিযোগ, এর ফলে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হচ্ছে।

তবে ভারত বারবার জানিয়েছে, জ্বালানি নিরাপত্তার কারণে এবং বাজারের বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করেই রাশিয়া থেকে তেল কেনা হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলির নিষেধাজ্ঞার পর ছাড়মূল্যে রাশিয়ার তেল কেনায় ভারত লাভবান হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে আরোপিত কঠোর শুল্ক ভারত-মার্কিন বাণিজ্যে বড় প্রভাব ফেলেছে। প্রায় ৫৫% ভারতীয় রপ্তানি পণ্য, যার বাজারমূল্য প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার, বর্তমানে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভিয়েতনাম, চীন ও বাংলাদেশের তুলনায় মার্কিন বাজারে পিছিয়ে পড়ছে। সম্প্রতি ওয়াশিংটন থেকে নির্ধারিত এক বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের দিল্লি সফরও বাতিল হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক কৌশল ও অভ্যন্তরীণ চাপের কারণে শেষ পর্যন্ত ভারতকে আলোচনার পথে আসতেই হবে, যদিও নয়াদিল্লি আপাতত নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।