অমৃতসর, ৪ সেপ্টেম্বর : ভারতের সীমান্ত রাজ্য পাঞ্জাবে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায়, আজ রাজ্যে কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান একদিনের সফরে পৌঁছেছেন। তিনি রাজ্যের বন্যাক্রান্ত এলাকার পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে দেখা করতে অমৃতসর, গুরুদাসপুর ও কপুরথলা জেলার বিভিন্ন গ্রাম পরিদর্শন করছেন।
জালন্ধর থেকে আমাদের প্রতিনিধির প্রতিবেদনে জানা গেছে, পাঞ্জাবের রাজ্যপাল গুলাবচাঁদ কাটারিয়া বন্যার প্রেক্ষাপটে রাজ্যের পাঁচটি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা—অমৃতসর, পাঠানকোট, গুরুদাসপুর, তরণতারণ ও ফিরোজপুর—এর বিস্তারিত রিপোর্ট কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছেন। রাজ্যপাল রাজ্যের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে জীবন, সম্পত্তি, কৃষিজমি ও পরিকাঠামোর ওপর বন্যার প্রভাব সম্পর্কে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে অবহিত করেন।
মন্ত্রী জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জরুরি প্রয়োজনের বিষয়ে তিনি রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করবেন। শিবরাজ সিং চৌহান আশ্বাস দিয়েছেন, এই দুর্দিনে পাঞ্জাবের পাশে কেন্দ্রীয় সরকার আছে এবং দ্রুত ত্রাণ ও পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদান করা হবে।
এই কঠিন পরিস্থিতিতে সীমান্ত রক্ষা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করে চলেছে প্রথম সারির প্রতিরক্ষা বল হিসেবে। পাকিস্তান সীমান্ত রক্ষা করার পাশাপাশি বিএসএফ-এর জওয়ানরা গুরুদাসপুর, ফিরোজপুর, অমৃতসর ও পাঠানকোটের শত শত গ্রামবাসীকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করছেন। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে উদ্ধার ও ত্রাণ কাজ জোরদার করা হয়েছে।
যদিও অনেক সীমান্ত পোস্ট জলমগ্ন হয়ে পড়েছে, তবুও বিএসএফ-এর মনোবল অটুট। বাহিনীর পাঞ্জাব ফ্রন্টিয়ারের আইজি ডঃ অতুল ফুলজুলে জানিয়েছেন, সংকটের এই সময়ে বিএসএফ সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করছে। হেলিকপ্টার ও নৌকার মাধ্যমে আহত ও অসুস্থদের উদ্ধার, চিকিৎসা সহায়তা, খাদ্য ও পশুখাদ্য বিতরণ, বাঁধের ভাঙা অংশ মেরামত ইত্যাদি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বাহিনী। একইসঙ্গে সীমান্তে নার্কো-স্মাগলিং প্রতিরোধেও সাফল্য এসেছে।
পাঞ্জাবে অবিরাম বৃষ্টি, বিয়াস, শতদ্রু, রাভি ও ঘগ্ঘর নদীর জলস্তর বৃদ্ধি এবং ভাকরা, পং ও রণজিৎ সাগর বাঁধ থেকে অতিরিক্ত জল ছাড়ার কারণে রাজ্যের ২৩টি জেলার ১,৬৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ১.৭৫ লাখ একর কৃষিজমি ডুবে গেছে, ধানসহ বহু ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গুরুদাসপুরে ১.৪৫ লাখ, অমৃতসরে ১.১৭ লাখ, ফিরোজপুরে ৩৯,০৭৬ ও ফাজিলকায় ২১,৫০০ জনের বেশি মানুষ এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৩ জন নিখোঁজ।
এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় সেনা, বায়ুসেনা, বিএসএফ, এনডিআরএফ ও বিভিন্ন এনজিও মিলে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধার ও ত্রাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। চণ্ডীগড়ের আবহাওয়া দফতরের ডিরেক্টর সুরেন্দ্র পাল জানিয়েছেন, আজ থেকে ৮ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাঞ্জাবে বৃষ্টির পরিমাণ হ্রাস পাবে, তবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েই যাচ্ছে।
অন্যদিকে, ফুঁসে ওঠা শতদ্রুর প্রভাবে পটিয়ালা ও জালন্ধর জেলাতেও নতুন করে প্লাবন শুরু হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৭ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

