দিল্লি সহ উত্তর ভারতে প্রবল বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত, হিমাচলে ভূমিধসে মৃত ৫, একাধিক জেলায় লাল সতর্কতা

নয়াদিল্লি/শিমলা, ৩ সেপ্টেম্বর: দিল্লিতে টানা মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে আজ সকালে যমুনা নদীর জল বিপদসীমা ছাড়িয়ে পৌঁছেছে ২০৬.৮ মিটার। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিচু এলাকাগুলির বাসিন্দাদের সুরক্ষিত জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, এবং পুরনো রেল ব্রিজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

দিল্লির মন্ত্রী প্রবেশ ভার্মা আজ সকালে আইটিও ব্যারাজ পরিদর্শন করেন। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আছে, আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।” তিনি জানান, গত ছয় মাসে সরকার যমুনার জলধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে এবং নতুন চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে। তাঁর দাবি, আজ সন্ধ্যা থেকে জলস্তর কমতে শুরু করবে।

ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ ছত্তিশগড়, পূর্ব রাজস্থান, গুজরাট, জম্মু-কাশ্মীর, লাদাখ, কঙ্কন, গোয়া, মধ্য মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা ও বিদর্ভ অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।

উত্তরাখণ্ড, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, চণ্ডীগড়, দিল্লি ও হিমাচল প্রদেশে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। দেশের উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণাঞ্চলেও একই পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে বলে জানিয়েছে আইএমডি ।

আগামী সাত দিন দেশের পূর্ব ও মধ্য অংশে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

হিমাচল প্রদেশে টানা বর্ষণে কাংগ্রা, চাম্বা, মান্ডি ও কুল্লু জেলায় আজ লাল সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিধসের খবর মিলেছে।

মান্ডি জেলার সুন্দরনগরের জুঙ্গমবাগ এলাকাতে পাহাড় ধসে দুটি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। এই ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। উদ্ধার কাজ এখনও চলছে।

বর্তমানে রাজ্যের ৪টি জাতীয় সড়ক ও ১,৩৩৪টি রাস্তা বন্ধ রয়েছে। ২,১৮০টি বিদ্যুৎ ট্রান্সফর্মার এবং ৭৭৭টি পানীয় জল প্রকল্প কাজ করছে না। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে চাম্বা, কাংগ্রা, কুল্লু, সোলান ও শিমলা জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

রাজ্য সরকার বন্যা ও ভারী বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলিতে জরুরি ত্রাণের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।

বিশেষ প্রধান সচিব (রাজস্ব ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা) অরবিন্দ কুমার জানিয়েছেন, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কমারেড্ডি, মেদক, নিরমল, আদিলাবাদ, নিজামাবাদ, কুমারাম ভীম অসিফাবাদ এবং রাজান্না-সিরসিলা জেলাকে ১০ কোটি টাকা করে দেওয়া হবে। বাকি ২৬টি জেলা পাবে ৫ কোটি টাকা করে।

এই অর্থ ব্যবহার করা হবে রাস্তা, কালভার্ট, ব্রিজ, কজওয়ে সংস্কার এবং পানীয় জলের সরবরাহ পুনরুদ্ধারে। তবে এই অর্থ মৃত্যুজনিত বা ফসল ও গবাদি পশুর ক্ষতির জন্য প্রয়োগ করা যাবে না।

সরকার মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রদানের ঘোষণা করেছে।

উল্লেখ্য, গত মাসের ২৫ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত ভারী বর্ষণে এই জেলাগুলিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে রাজ্যে ২৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে, যেখানে ৮টি জেলা ‘অত্যধিক বৃষ্টি’ এবং ১০টি জেলা ‘বেশি বৃষ্টি’ পেয়েছে।