নয়াদিল্লি, ২ সেপ্টেম্বর — প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গলবার দিল্লির যশোভূমি কনভেনশন সেন্টারে ‘সেমিকন ইন্ডিয়া ২০২৫’ সম্মেলনের উদ্বোধন করে জিডিপি বৃদ্ধির সাম্প্রতিক তথ্য নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “এই বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের জিডিপি তথ্য আবারও প্রমাণ করেছে যে ভারত প্রত্যাশা ও পূর্বাভাসের অনেক ঊর্ধ্বে পারফর্ম করেছে। এখন আর কিছুই ভারতকে থামাতে পারবে না।”
বিশ্ব অর্থনীতি যেখানে মন্দা ও ‘অর্থনৈতিক স্বার্থপরতা’র মুখোমুখি, সেখানে ভারত ৭.৮ শতাংশ হারে জিডিপি বৃদ্ধির মাধ্যমে এক ‘বিশ্বস্ত অর্থনৈতিক শক্তি’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই প্রবৃদ্ধি সামগ্রিক— কৃষি, শিল্প, ও পরিষেবা খাতে সমানভাবে ছড়িয়ে আছে। এটি আমাদের নাগরিকদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে এবং ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করার পথে এগিয়ে নিচ্ছে।”
প্রধানমন্ত্রী মোদি এই প্রসঙ্গে মার্কিন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ”মৃত অর্থনীতি’ মন্তব্যকে একরকম খণ্ডন করেই বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসনের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ— রাশিয়ার তেল আমদানি ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে — আমাদের উন্নয়নের গতি থামাতে পারেনি।”
সেমিকন্ডাক্টর খাতে ভারতের অগ্রগতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আগের শতাব্দী গঠিত হয়েছে তেলের মাধ্যমে। কিন্তু ২১ শতকের শক্তি নিহিত একটি ক্ষুদ্র চিপে— এই চিপই আজকের ‘ডিজিটাল হিরে’। বিশ্ব এখন ভারতের ওপর আস্থা রাখছে এই খাতে।” তিনি জানান, ২০২১ সালে সেমিকন ইন্ডিয়া প্রোগ্রামের সূচনা হয়, ২০২৩ সালে প্রথম প্লান্ট অনুমোদন পায়, ২০২৪-এ আরও কয়েকটি, আর ২০২৫ সালে পাঁচটি নতুন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এই খাতে মোট ১.৫ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ হচ্ছে, যার মাধ্যমে ভারত ‘ব্যাকএন্ড’ থেকে বেরিয়ে এসে একটি ‘ফুল-স্ট্যাক সেমিকন্ডাক্টর নেশন’-এ পরিণত হচ্ছে।
বিনিয়োগকারীদের সুবিধার জন্য চালু হওয়া ‘ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো সিস্টেম’-এর কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এখন কেন্দ্র ও রাজ্যের সব অনুমোদন একক প্ল্যাটফর্ম থেকেই পাওয়া যাচ্ছে, ফলে বিনিয়োগকারীদের ঝামেলা অনেকটাই কমেছে।”
বক্তৃতার শুরুতেই বিদেশ সফর শেষ করে দেশে ফেরার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী রসিকতা করে বলেন, “গত রাতে আমি জাপান ও চীন সফর সেরে দেশে ফিরেছি। আপনারা কি আমার যাওয়ায় খুশি, না ফিরে আসায়?”
শেষে তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, “আমাদের যাত্রা দেরিতে শুরু হলেও আজ আর ভারতকে কেউ থামাতে পারবে না। ভারতের ক্ষুদ্রতম চিপ বিশ্বে বৃহত্তম পরিবর্তন আনবে।”

