জামিয়ত প্রধানকে তীব্র আক্রমণ হিমন্ত বিশ্ব শর্মার, ‘অহংকার’ থাকলে জেলের হুঁশিয়ারি

গুয়াহাটি, ২ সেপ্টেম্বর: অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা মঙ্গলবার রাজ্য সফরে আসা জামিয়ত উলেমা-ই-হিন্দের সভাপতি মাওলানা মাহমুদ মাদানিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। মুখ্যমন্ত্রী মাদানির আচরণকে ‘অহংকারী’ বলে আখ্যা দেন এবং হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “বেশি চালাকি করলে জেলে পাঠাবো।”

সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শর্মা প্রশ্ন তোলেন, “মাদানি কি ঈশ্বর? ওনার অহংকার কংগ্রেসের উপর নির্ভর করে; কংগ্রেস না থাকলে তাঁর কোনো মূল্য নেই।” মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যে রাজনৈতিক দিক স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে, যেখানে মাদানির প্রভাবকে বিরোধী কংগ্রেসের অস্তিত্বের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “আমি মুখ্যমন্ত্রী, মাদানি নন। ওনাকে আমি ভয় পাই না, কেয়ারও করি না। উনি উচ্ছেদস্থল পরিদর্শন করেছেন, দেখেছেন কী হয় যখন কেউ বেআইনিভাবে জমি দখলের চেষ্টা করে। এবার আর চিন্তা করে কথা বলবেন। বিজেপি কাউকে ভয় পায় না—ভিজিআর বা পিজিআর জমি দখলের চেষ্টা করলে, উচ্ছেদ হবেই।”

এর আগে, মাওলানা মাহমুদ মাদানি এক প্রেস কনফারেন্সে মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, “আমি গতকাল থেকে এখানে আছি। উনি চাইলে আমাকে বাংলাদেশে পাঠাতে পারেন। উনি শুধু আমাকেই নয়, যেকোনো মুসলিমকেই বাংলাদেশে পাঠাতে চান। আমার পিতা ও পিতামহ স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় কারাবরণ করেছেন, অথচ এখন তাঁদের বংশধরদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি বলতে চাই, যারা সমাজে ঘৃণা ছড়ায়, তাদেরই পাকিস্তানে পাঠানো উচিত। কেন তারা এই সুন্দর, ঐতিহাসিক দেশে থাকবে?”

মাওলানা মাদানি আরও বলেন, “উচ্ছেদ অভিযান সব জায়গাতেই হয়, কিন্তু যা আমি অসমে দেখেছি, তা হৃদয়বিদারক। কোনো রাষ্ট্র তার নাগরিকদের উপর এভাবে আচরণ করতে পারে না। আমি সরকারকে বলতে চাই, বিদেশি ও নাগরিকদের মধ্যে পার্থক্য করতে হবে। অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়ন হোক, কিন্তু ভারতীয় নাগরিকদের যেন সম্মানের সঙ্গে পুনর্বাসন দেওয়া হয়।”

তিনি বিতাড়িত পরিবারদের ‘অজ্ঞাত’, ‘মিয়া’ বা ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে চিহ্নিত করার বিরুদ্ধেও কড়া আপত্তি জানান। তাঁর মতে, “এই ভাষা ব্যবহারে সমাজে বিভাজন আরও বেড়ে যায়। ক্ষমতা ধরে রাখতে কিছু মানুষ এই রকম ভাষা ব্যবহার করেন।”

এই বিতর্কের মাধ্যমে অসমে বিজেপি সরকারের সঙ্গে ধর্মীয় সংগঠনের টানাপোড়েন আরও প্রকট হয়ে উঠল। জমি উচ্ছেদ, নাগরিকত্ব এবং ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে চলমান রাজনৈতিক বক্তব্য ও পাল্টা বক্তব্য রাজ্যে বিভাজনের আবহকেই সামনে নিয়ে আসছে।