ভারতে কার্যকর ‘ইমিগ্রেশন ও ফরেনার্স অ্যাক্ট, ২০২৫’; বেআইনি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানে কেন্দ্র, বাড়ল ইমিগ্রেশন ব্যুরোর ক্ষমতা

নয়াদিল্লি, ২ সেপ্টেম্বর – ভারতে বেআইনি অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড় পদক্ষেপ নিল কেন্দ্র সরকার। ১ সেপ্টেম্বর থেকে দেশে কার্যকর হল ‘ইমিগ্রেশন ও ফরেনার্স অ্যাক্ট, ২০২৫’, যার মাধ্যমে পাসপোর্ট, ভিসা ও অভিবাসন সংক্রান্ত নীতিতে কড়াকড়ি আনা হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী, ইমিগ্রেশন ব্যুরো-কে বেআইনি বিদেশিদের শনাক্ত, আটক ও বহিষ্কারের জন্য আইনি ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভুয়া পাসপোর্ট বা ভিসা ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধানও রাখা হয়েছে।

নতুন আইনে বলা হয়েছে, হোটেল, হাসপাতাল, নার্সিং হোম, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে বিদেশি নাগরিকদের সম্পর্কে তথ্য সরকারের কাছে জমা দিতে হবে। এদের মধ্যে কেউ ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও থেকে গেলে, তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যই এই পদক্ষেপ। আইনটি কেন্দ্র সরকারকে এমনসব জায়গার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের ক্ষমতা দেয়, যেগুলি “বিদেশিদের দ্বারা নিয়মিতভাবে পরিদর্শিত”। প্রয়োজনে সেই জায়গা বন্ধ করে দেওয়া, নির্দিষ্ট শর্তে পরিচালনার অনুমতি বা নির্দিষ্ট শ্রেণির বিদেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারিরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এই আইনের গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ইমিগ্রেশন ব্যুরো, যা ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটি এখন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো-র তত্ত্বাবধানে কেন্দ্র, রাজ্য ও অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে বেআইনি বিদেশিদের সনাক্ত ও বহিষ্কারে কাজ করবে। আগে ব্যুরো শুধু নিয়ন্ত্রক ভূমিকায় কাজ করত, কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো এটি আইনি ভিত্তি পেয়েছে। একইসঙ্গে, এই সংস্থা এখন বিদেশিদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, অভিবাসন বিষয়ক তথ্যের আইটি সিস্টেম পরিচালনা, এবং সরকারের অভিবাসন সংক্রান্ত নীতিগত বিষয়ে পরামর্শদাতা হিসেবেও কাজ করবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১৫ আগস্ট, স্বাধীনতা দিবসে লাল কেল্লা থেকে দেওয়া ভাষণে বলেন, “একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের জনসংখ্যার গঠন পাল্টানোর চেষ্টা চলছে, একটি নতুন সংকটের বীজ বপন করা হচ্ছে… সেই কারণেই আমরা একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ‘ডেমোগ্রাফি মিশন’ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” এই বক্তব্যের ঠিক পরেই সরকার এই আইন কার্যকর করে, যা রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

অপরদিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে এই বিলের বিতর্কে জানান, ভারত সরকার পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা ও ব্যবসার উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে আগতদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত, তবে ভারতকে কেউ যেন “ধর্মশালা” ভাবে, তা বরদাস্ত করা হবে না।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু সংসদে জানিয়েছিলেন যে ভারতে আনুমানিক দুই কোটিরও বেশি বেআইনি বাংলাদেশি অভিবাসী রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন আইনটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মে মাস থেকে একাধিক বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বেআইনি বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের তীব্রতা বেড়েছে। নির্বাচন কমিশনও বিশেষ নিবিড় পর্যালোচনা শুরু করেছে, যার মূল উদ্দেশ্য ভোটার তালিকা থেকে বেআইনি অভিবাসীদের বাদ দেওয়া।

সরকারের মতে, বেআইনি অভিবাসন কেবলমাত্র নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়, বরং তা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পদের উপর বিরাট বোঝা তৈরি করে। ‘ইমিগ্রেশন ও ফরেনার্স অ্যাক্ট, ২০২৫’-এর মাধ্যমে এখন এই সমস্যার মোকাবিলায় কেন্দ্র সরকার অনেক বেশি প্রস্তুত ও শক্তিশালী বলে মনে করা হচ্ছে।