রাষ্ট্রপতি কর্ণাটক সফর, মাইসুরুতে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া

মাইসুর, ১ সেপ্টেম্বর : রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সোমবার কর্ণাটকের মাইসুর বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। এ সময় কর্ণাটকের রাজ্যপাল থাওয়ারচাঁদ গেহলট-ও উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপতি মুর্মু তাঁর দু’দিনের কর্ণাটক সফরে একাধিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। সফরের অন্যতম প্রধান অনুষ্ঠান হল অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব স্পিচ অ্যান্ড হিয়ারিং এর ডায়মন্ড জুবিলি (৬০ বছর পূর্তি) উদ্‌যাপন।

এআইআইএসএইচ-এর ডায়মন্ড জুবিলি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন: গর্ভাবস্থার মধ্যেই শিশুর শ্রবণ ও বাক্‌ বিকাশ সংক্রান্ত সমস্যার সনাক্তকরণ এক যুগান্তকারী সাফল্য। এই ক্ষেত্রে মাইসুরুর এআইআইএসএইচ-এর ভূমিকা প্রশংসার যোগ্য।”

তিনি জানান, রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই এআইআইএসএইচ-এর সম্প্রসারণের জন্য ১০ একর জমি বরাদ্দ করেছে এবং সবরকম সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া বলেন, এআইআইএসএইচ এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান, যা শ্রবণ ও বাক্‌ সমস্যার গবেষণা, চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণে কাজ করছে। “এই প্রতিষ্ঠান কণ্ঠহীনদের কণ্ঠ দিয়েছে, শ্রবণহীনদের জীবনে বাক্‌ ফিরিয়ে দিয়েছে। মাইসুরুতে এমন একটি প্রতিষ্ঠান থাকা এবং তার ৬০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন করাটা আমাদের জন্য গর্বের।”

তিনি বলেন, দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি মানবজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংবেদন। এই দুটি ইন্দ্রিয় ভাষা বিকাশে মুখ্য ভূমিকা রাখে।

২০১১ সালের জাতীয় জনগণনার তথ্য অনুযায়ী, কর্ণাটকে প্রায় ৩.৩ লক্ষ মানুষ শ্রবণ ও বাক্‌ প্রতিবন্ধকতায় ভুগছেন, যা জনসংখ্যার ০.৫ শতাংশ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই মানুষগুলো শুধুমাত্র সংখ্যা নয়, বরং সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি জানান, এআইআইএসএইচ-কে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে “সেন্টার অফ এক্সিলেন্সেস” হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ একে “সায়ন্স এন্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট” হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর এআইআইএইচএস-এর আউটরিচ সেন্টার এবং নবজাতক স্ক্রিনিং ইউনিট স্থাপনের জন্য জেলা, তালুক হাসপাতাল ও কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে স্থান দিয়েছে।

এআইআইএসএইচ-এর সঙ্গে সমন্বয়ে, রাজ্য সরকার “শ্রবণ সঞ্জীবিনী” নামে একটি প্রকল্প শুরু করেছে, যার মাধ্যমে অভাবী শিশুদের জন্য বিনামূল্যে ককলিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জারি করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

মাইসুরুর বরুনা গ্রামে ১০ একর জমি এআইআইএসএইচ-কে বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে তাদের ক্লিনিকাল ও পুনর্বাসন পরিষেবা সম্প্রসারণের জন্য। এছাড়াও, মাইসুরু সিটি কর্পোরেশন এআইআইএসএইচ ক্যাম্পাসে ২.৫৫ কোটি টাকার কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে: ভিন্নভাবে সক্ষম শিশুদের জন্য অ্যাম্ফিথিয়েটার, প্রতিবন্ধী-বান্ধব সুবিধা, পার্ক, ওয়েটিং রুম ও স্পিচ ও হিয়ারিং ইমপেয়ার্ড শিশুদের জন্য মিউজিয়াম।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এআইআইএসএইচ-এর মতো প্রিমিয়ার প্রতিষ্ঠান থাকার ফলে আজ আমরা গর্ভকালীন পর্যায়েও যোগাযোগ সমস্যা সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। “এই প্রতিষ্ঠানের গবেষণা, শিক্ষা ও সচেতনতামূলক প্রচেষ্টার জন্য সমাজ উপকৃত হয়েছে। আমি আশা করি, এআইআইএসএইচ ভবিষ্যতে আরও বড় উচ্চতায় পৌঁছবে এবং বাক্‌ ও শ্রবণ সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করে মানবজাতিকে নতুন আলো দেবে।”