প্রধানমন্ত্রী মোদী ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক, শান্তিপূর্ণ সীমান্ত, বাণিজ্য ভারসাম্য ও ব্রিকস সম্মেলনে আমন্ত্রণের ওপর জোর

তিয়ানজিন, ৩১ আগস্ট: সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন সম্মেলনের সাইডলাইনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এই আলোচনায় সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, মানুষে-মানুষে সম্পর্ক জোরদার করা, বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস, কৌশলগত স্বাতন্ত্র্য রক্ষা এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতাকে কেন্দ্র করে একাধিক বিষয়ে গভীর আলোচনা হয়। দুই নেতা তাঁদের আগের সাক্ষাতের পর থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিবাচক অগ্রগতিকে স্বাগত জানান এবং পুনর্ব্যক্ত করেন যে ভারত ও চীন প্রতিদ্বন্দ্বী নয় বরং উন্নয়নের অংশীদার। তাঁরা মনে করেন, মতপার্থক্য থাকা স্বাভাবিক, তবে তা যেন বিরোধে পরিণত না হয়।

প্রধানমন্ত্রী মোদী সীমান্ত অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং জানান, সীমান্ত পরিস্থিতির উন্নতি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতির পূর্বশর্ত। দুই নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেন যে, গত বছর সফলভাবে সেনা বিচ্ছিন্নকরণ সম্পন্ন হয়েছে এবং তৎপরবর্তী সময়ে সীমান্তে শান্তি বজায় রয়েছে। তাঁরা সীমান্ত সমস্যা সমাধানে নিযুক্ত বিশেষ প্রতিনিধিদের চলতি মাসে গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহকে স্বাগত জানান এবং তাঁদের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার অঙ্গীকার করেন।

মানুষে-মানুষে সম্পর্ক জোরদারে দুই নেতা কাইলাশ মানসসরোভার যাত্রা পুনরায় শুরু হওয়া এবং পর্যটন ভিসা চালুর বিষয়টি উল্লেখ করেন এবং ভবিষ্যতে সরাসরি বিমান পরিষেবা ও ভিসা সহজীকরণে উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, দুই দেশের নেতারা তাঁদের বৃহৎ অর্থনীতির ভূমিকা বিশ্ববাণিজ্যে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা স্বীকার করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ভারতের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক সম্প্রসারণ করা উচিত। দুই পক্ষই সম্মত হন যে কেবল অর্থনৈতিক বাস্তবতা নয়, কৌশলগত ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত।

আলোচনায় কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। প্রধানমন্ত্রী মোদী স্পষ্টভাবে বলেন, ভারত ও চীন উভয়েই কৌশলগত স্বাতন্ত্র্য অনুসরণ করে এবং তাঁদের সম্পর্ক তৃতীয় কোনও দেশের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা উচিত নয়। দুই নেতা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে — যেমন সন্ত্রাসবাদ ও বহুপাক্ষিক বাণিজ্যে ন্যায্যতা — পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী চীনের এসসিও সভাপতিত্বকে সমর্থন জানান এবং একইসঙ্গে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ২০২৬ সালে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিতব্য ব্রিকস সম্মেলনে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। প্রেসিডেন্ট শি এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং ভারতের ব্রিকস সভাপতিত্বে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদী একই দিনে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর স্থায়ী কমিটির সদস্য সাই কিছ-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী ভারতের তরফে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ রূপরেখা ও নেতৃবৃন্দের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করেন এবং চীনের সহযোগিতা কামনা করেন। সাই কিছ জানান, চীন ভারত-চীন সম্পর্ককে আরও গভীরতর করতে আগ্রহী এবং দুই দেশের নেতাদের মধ্যে যে বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে, তা বাস্তবায়নে চীন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এই বৈঠক দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় সূচনার ইঙ্গিত দিল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বহু প্রতীক্ষিত সীমান্ত সমস্যা সমাধানের পথ আরও সুগম হলো, সেইসঙ্গে কৌশলগত পারস্পরিক স্বীকৃতি এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা আগামীর পথে দিশা দেখাল।