নয়াদিল্লি, ২৮ আগস্ট: আজ ছত্তিশগড়, উপকূল কর্ণাটক, মধ্য মহারাষ্ট্র ও উত্তরাখণ্ডে বিক্ষিপ্তভাবে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর। এছাড়াও আগামী ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে ওড়িশা, বিদর্ভ, মধ্যপ্রদেশ, উপ-হিমালয়ান পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম এবং ঝাড়খণ্ডে বিচ্ছিন্নভাবে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
গুজরাট অঞ্চল, গোয়া, কনকণ ও মধ্য মহারাষ্ট্রে আগামী সপ্তাহ জুড়েই অনুরূপ আবহাওয়া বজায় থাকবে বলে পূর্বাভাস। উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, পূর্ব রাজস্থান ও হরিয়ানায় আগামী ৭ দিন বিচ্ছিন্নভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। দিল্লি ও এনসিআর-এ আগামী ৫ দিন হালকা থেকে খুব হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছে।
এদিকে, পাঞ্জাবে বন্যা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। গুরদাসপুর, ফিরোজপুর, ফাজিলকা, কপূরথলা, অমৃতসর, হোশিয়ারপুর ও তার্ন তারন জেলার একাধিক গ্রাম এবং শত শত একর কৃষিজমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। ভারতীয় সেনা, বিমান বাহিনী, বিএসএফ, এনডিআরএফ, পাঞ্জাব পুলিশ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধার কাজে নিযুক্ত রয়েছেন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই ৬৫টি ট্রেন বাতিল করেছে এবং ২৫টি ট্রেন মাঝপথেই থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাঠানকোট, লুধিয়ানা, জালন্ধর ও অমৃতসরে হেল্পডেস্ক খোলা হয়েছে।
রঞ্জিৎ সাগর, পং এবং ভাকরা বাঁধের জলাধারগুলি উপচে উঠেছে। নিয়ন্ত্রিতভাবে জল ছাড়া হচ্ছে। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মান গুরদাসপুরের বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
হিমাচল প্রদেশের কাংরা ও চাম্বা জেলায় এনডিআরএফ ব্যাপক উদ্ধার ও স্থানান্তর অভিযান চালাচ্ছে। গত দুই দিনে ৩৭০০-এর বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। কাংরার ইন্দোরা এলাকায় আর্নি বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে বিয়াস নদীর জল ঢুকে পড়ে। রাতে নদীর জলস্তর হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১২ জন ছাত্র-ছাত্রী ও ১৫ জন কর্মী-সহ মোট ৪২৭ জনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে আরও ২৬ জনকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে।
চাম্বা জেলার গৌরীকুণ্ড সংলগ্ন ধঞ্চোতে চলছে শ্রীর মানিমহেশ যাত্রা। সেখানে এনডিআরএফ, হিমাচল পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের সহযোগিতায় একটি অস্থায়ী পুল তৈরি করে ৩২৬৯ জন তীর্থযাত্রীকে দুনালি পর্যন্ত সরিয়ে আনা হয়েছে। ভূমিধস ও প্রবল বৃষ্টির কারণে রাজ্যের দুটি জাতীয় সড়ক ও ৫৮২টি রাস্তা বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে, তেলেঙ্গানার কামারেড্ডি, মেদক ও নির্মল জেলায় অতি ভারী বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কামারেড্ডির আর্গোন্ডা এলাকায় আজ সকাল ৫টা পর্যন্ত ৪৩.১ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে, যা রাজ্যের মধ্যে সর্বাধিক। এই তিন জেলা ছাড়াও রাজ্যের অন্যান্য এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে, বহু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, শহর-নগরেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এনডিআরএফ ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে কামারেড্ডি জেলায় ১০০০-র বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে।
রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলিতে বিশেষ অফিসার নিয়োগ করেছে এবং জেলা প্রশাসকদের সর্বদা সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এ. রেভন্থ রেড্ডি আজ আকাশপথে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করবেন।
মেদক জেলার পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। টানা বৃষ্টিতে বহু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ভারতীয় সেনার সাউদার্ন কমান্ড বন্যা মোকাবিলায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে। সেনার ইঞ্জিনিয়ারিং টাস্ক ফোর্স রাস্তা পরিষ্কারে, সংযোগ পুনঃস্থাপনে এবং মেডিক্যাল টিমগুলির মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসা পরিষেবা দিচ্ছে। সেনাবাহিনী বিশেষ নৌকা ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করছে এবং ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছে।
দেশজুড়ে এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী ও উদ্ধারকারী সংস্থাগুলি সর্বশক্তি দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের প্রাণ ও সম্পত্তি রক্ষায়। আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কবার্তা অনুযায়ী আগামী কয়েক দিনও ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।

