ওয়াশিংটন, ২৬ আগস্ট: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ভারতের বিরুদ্ধে কার্যত সীমিত বাণিজ্যযুদ্ধ ঘোষণা করল যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার জারি করা একটি সরকারি নোটিফিকেশনে জানানো হয়েছে, ভারতের রপ্তানিকৃত বেশিরভাগ পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক (২৫ শতাংশ ট্যাক্স এবং ২৫ শতাংশ জরিমানা) আরোপ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ২৭ আগস্ট রাত ১২টা (ইস্টার্ন টাইম) থেকে, অর্থাৎ ভারতের সময় অনুযায়ী ২৮ আগস্ট সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের জারি করা নোটিফিকেশনে বলা হয়েছে, এই ট্যারিফ আরোপের পেছনে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে “রাশিয়ার ফেডারেশন থেকে উদ্ভূত হুমকি” এবং ভারতের “পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে রুশ তেল আমদানি”। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশ অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এই পদক্ষেপে চীনকে ছাড় দিয়ে শুধুমাত্র ভারতকে নিশানা করা হয়েছে, যদিও চীন ভারতের তুলনায় অনেক বেশি রুশ তেল আমদানি করে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ ভারসাম্যহীন এবং প্রতিশোধমূলক। কেউ কেউ বলছেন, রুশ তেল থেকে রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টা জোরদার হচ্ছে, আবার কেউ বলছেন ব্রিকস-এর মাধ্যমে ডলারের আধিপত্য চ্যালেঞ্জ করায় ভারতকে শাস্তি দিচ্ছেন ট্রাম্প। এমনকি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি আনার দাবিতে ট্রাম্পের ভূমিকাকে ভারত স্বীকৃতি না দেওয়াও এই ট্যারিফের একটি পেছনের কারণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প নিজে এবং হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট এই ট্যারিফকে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে না ঝোঁকার বার্তা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই ঘোষণা এসেছে, যা কূটনৈতিক দিক থেকেও একটি তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত।
এই সিদ্ধান্তে ভারতের ৮৭.৩ বিলিয়ন মূল্যের মার্কিন রপ্তানির প্রায় অর্ধেকই প্রভাবিত হবে। বিশেষ করে টেক্সটাইল ও পোশাক, রত্ন ও গহনা, সামুদ্রিক খাদ্য (বিশেষ করে চিংড়ি) এবং চামড়াজাত পণ্যের উপর এই ট্যারিফ কার্যকর হবে। তবে ভারত থেকে আমদানি করা ওষুধ, ইলেকট্রনিকস এবং স্মার্টফোন (যেমন অ্যাপল আইফোন) এই ট্যারিফের আওতার বাইরে থাকবে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই শুল্ক আরোপের ফলে ভারতীয় পণ্যের প্রতিযোগিতা ক্ষমতা হ্রাস পাবে, কারণ প্রতিবেশী দেশগুলি এখনও ১০ থেকে ২৫ শতাংশ শুল্কে পণ্য রপ্তানি করতে পারছে। এর ফলে মার্কিন বাজারে ভারতের রপ্তানি কমে যাবে এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতীয় এমএসএমই (ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প) খাত, যা বহু মানুষের কর্মসংস্থানের উৎস।
আর্থিক দিক থেকে, বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন যে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভারতের জিডিপি ০.২% থেকে ১% পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এতে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৭ বিলিয়ন থেকে ২৫ বিলিয়নের মধ্যে। তবে সামগ্রিকভাবে ভারতের অর্থনীতি মূলত অভ্যন্তরীণ ভোগব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল হওয়ায়, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমে গেলেও সার্বিক অর্থনীতির ওপর প্রভাব কিছুটা নিয়ন্ত্রিত থাকবে।

