নয়াদিল্লি, ২১ আগস্ট : লোকসভায় ‘সংবিধান সংশোধনী বিল’ পেশ করার পর শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক। এই বিল অনুসারে, কোনও প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রী যদি এমন অপরাধে গ্রেফতার হন যার শাস্তি পাঁচ বছরের বেশি, এবং তিনি যদি টানা ৩০ দিন জেলে থাকেন, তাহলে তাকে পদচ্যুত করা যাবে — এমনকি বিচার না হলেও। এই প্রস্তাবিত আইনকে “অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক” আখ্যা দিয়ে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা ও রাজ্যসভার সদস্য পি. চিদাম্বরম কড়া সমালোচনা করেছেন।
এক্স-এ চিদাম্বরম প্রশ্ন তোলেন, “একজন মুখ্যমন্ত্রী যদি গ্রেফতারের ৩০ দিনের মধ্যে জামিন না পান, তাহলে তিনি পদচ্যুত হবেন! এমন অদ্ভুত কিছু আর শুনেছেন?” তিনি আরও বলেন, “না কোনও অভিযোগ গঠন, না বিচার, না দোষী সাব্যস্ত — কেবলমাত্র গ্রেফতারের ভিত্তিতে নির্বাচিত সরকারকে ভেঙে দেওয়া হবে! এটি সরাসরি জনরায়ের উপর আঘাত।”
চিদাম্বরম বলেন, বর্তমান সময়ে নিম্ন আদালত জামিন দিতে অনিচ্ছুক, উচ্চ আদালতও সংবেদনশীল নয়। হাজার হাজার জামিন আবেদন প্রতি মাসে সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়ে, এবং শুনানি পেতে দীর্ঘ সময় লাগে। এই পরিস্থিতিতে ৩০ দিনের মধ্যে জামিন পাওয়া কঠিন — ফলে নির্বাচিত সরকারের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে। তার কথায়, “এর চেয়ে বেশি অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক ও কেন্দ্রিক শক্তির অপব্যবহার আর কিছু হতে পারে না।”
এই বিলের বিরোধিতা করছে বিরোধী দলগুলোও। তাদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার এই আইনকে ব্যবহার করে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে কাজে লাগিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে পারে এবং পরবর্তী পর্যায়ে তাদের পদ থেকে সরাতে পারে। এভাবে নির্বাচিত সরকারগুলিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হবে বলে অভিযোগ তাদের।
অন্যদিকে, কেন্দ্রের যুক্তি, এই বিল আনা হয়েছে রাজনীতিতে নৈতিকতার মানদণ্ড বজায় রাখতে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, “যে নেতারা গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত, তারা দায়িত্বে থাকতে পারেন না। এই বিলের লক্ষ্য রাজনৈতিক জীবনে সততা ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা।”
লোকসভায় বিলটি উপস্থাপনের সময় তীব্র প্রতিবাদ জানান বিরোধী সাংসদরা। পরে এই বিল একটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে, যেখানে লোকসভা থেকে ২১ জন ও রাজ্যসভা থেকে ১০ জন সদস্য থাকবেন। এই বিলের ভবিষ্যৎ এখন নির্ভর করছে কমিটির সুপারিশ এবং সংসদের চূড়ান্ত বিতর্ক ও ভোটাভুটির উপর। তবে ইতোমধ্যেই এটি দেশজুড়ে সংবিধান, বিচারব্যবস্থা ও গণতন্ত্রের কাঠামো নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

