নয়াদিল্লি, ১৯ অগাস্ট : নয়াদিল্লিতে যমুনা নদীর জলস্তর মঙ্গলবার সকালে ক্রমাগত বাড়তে বাড়তে ২০৫.৭৯ মিটার পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা বিপদসীমা ২০৫.৩৩ মিটার ছাড়িয়ে গেছে এবং সরিয়ে নেওয়ার স্তর ২০৬ মিটারের একেবারে কাছাকাছি। পুরনো রেলওয়ে ব্রিজ এলাকায় সকাল ৮টা নাগাদ এই জলস্তর রেকর্ড করা হয়। সোমবার দুপুরে জলস্তর ছিল ২০৫.৫৫ মিটার, অর্থাৎ পরিস্থিতি দ্রুতই উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট সমস্ত দফতরকে বন্যার মতো পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, জলস্তর বাড়ার মূল কারণ হল হাথিনিকুন্ড ও ওয়াজিরাবাদ ব্যারেজ থেকে প্রতি ঘণ্টায় বিপুল পরিমাণ জল ছাড়া। ফ্লাড কন্ট্রোল বিভাগের মতে, হাথিনিকুন্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৩৮,৩৬১ কিউসেক এবং ওয়াজিরাবাদ থেকে ৬৮,২৩১ কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে যমুনার জলস্তরে। সাধারণত ব্যারেজ থেকে ছাড়া জল দিল্লি পৌঁছাতে ৪৮ থেকে ৫০ ঘণ্টা সময় লাগে। যদিও বর্তমানে তুলনামূলক কম পরিমাণ ছাড়াও জলস্তর ক্রমাগত বাড়ছে। মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যমুনা সংলগ্ন নিচু এলাকাগুলি পরিদর্শনে যেতে পারেন।
এদিকে, দেশের একাধিক রাজ্যে ভারতীয় আবহাওয়া দফতর থেকে আগামী কয়েক দিনের জন্য ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করা হয়েছে। পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্র, গুজরাট, কোনকন ও গোয়া অঞ্চলে ১৯ ও ২০ আগস্ট চরম বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। উপকূলীয় ও উত্তর অভ্যন্তরীণ কর্ণাটকেও মঙ্গলবার প্রবল বৃষ্টি হতে পারে। তেলেঙ্গানা, কেরল, তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশেও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এর পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমে ১৯ থেকে ২৪ আগস্টের মধ্যে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। উত্তর ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, চণ্ডীগড় ও উত্তরপ্রদেশেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
নয়াদিল্লি ও সংলগ্ন অঞ্চলে এখনো পর্যন্ত কোনো বড় বৃষ্টির সতর্কতা নেই, তবে মঙ্গলবার দুপুর ১:২৬-এ আইএমডি-এর নাউকাস্ট অনুযায়ী, দিল্লির কিছু অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি শুরু হয়েছে এবং আকাশ মেঘলা রয়েছে। নয়ডা, গাজিয়াবাদ ও ফরিদাবাদে হলুদ সতর্কতা জারি করে হালকা বজ্রপাত ও কম গতির ঝড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
সঙ্গে দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতের উপকূলবর্তী অঞ্চলে প্রবল ঝড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আন্দামান, কেরল, কর্ণাটক, লক্ষদ্বীপ, কমোরিন, গুজরাট, সৌরাষ্ট্র, ওড়িশা, তামিলনাড়ু ও পুদুচেরির কিছু এলাকায় ৪০-৬৫ কিমি প্রতি ঘণ্টা গতির দমকা হাওয়া বইতে পারে বলে জানিয়েছে আইএমডি। এই ঝড়ো হাওয়া মূলত আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তৈরি হওয়া ঝড়ো হাওয়ার কারণে।
ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে মহারাষ্ট্রের মুম্বই, আলিবাগ, রায়গড় রিজার্ভ ও শ্রীবর্ধন এলাকায় টানা দ্বিতীয় দিনের জন্য লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। গুজরাটের ওখা, দ্বারকা, নাভাদ্রা, মাংগ্রোল, দিউ, জুনাগড়, পোরবন্দর ও ভেরাভলেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় লাল সতর্কতা বলবৎ রয়েছে। এই সব এলাকায় প্রতি ঘণ্টায় ১৫ মিমি-র বেশি বৃষ্টিপাত ও ৪১-৬১ কিমি বেগে ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কা থাকছে।
পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হতে পারে বলে সতর্ক করছে আবহাওয়া দফতর। যমুনা নদীর আশপাশের নিচু এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরে প্রশাসনিক সতর্কতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।

