১৯৪৭ সালের দেশভাগের ভুক্তভোগীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধার্ঘ্য, ঐক্যের আহ্বান

নয়াদিল্লি, ১৪ আগস্ট: ভারতের ইতিহাসের অন্যতম বেদনাদায়ক অধ্যায় ১৯৪৭ সালের দেশভাগকে স্মরণ করে বৃহস্পতিবার ‘বিভাজন বিভীষিকা স্মৃতি দিবস’-এ দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ও আত্মচিন্তার দিন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এদিন দেশভাগের সময়কার “অসংখ্য মানুষের যন্ত্রণা ও বিপর্যয়”-কে স্মরণ করে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং এই দিনটিকে জাতীয় ঐক্য ও সহানুভূতির বন্ধন দৃঢ় করার উপলক্ষ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদী এক্স-এ লেখেন, “ভারত আজ PartitionHorrorsRemembranceDay পালন করছে, যেখানে আমরা সেই যন্ত্রণা ও অস্থিরতাকে স্মরণ করছি, যা অগণিত মানুষ ১৯৪৭ সালের বিভাজনের সময় সহ্য করেছিলেন। একই সঙ্গে, তাঁদের সহ্যশক্তি ও নতুনভাবে জীবন শুরু করার সাহসকেও আমরা কুর্নিশ জানাই।” তিনি আরও বলেন, “অনেকেই এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও নিজেদের জীবন নতুন করে গড়ে তোলেন এবং উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেন। আজকের দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের দায়িত্ব ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধন আরও মজবুত করে তোলা।”

এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও এক্স-এ লিখে দেশভাগকে ভারতের “অন্ধকারতম অধ্যায়” হিসেবে বর্ণনা করেন এবং কংগ্রেসের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “এই দিনটি সেইসব মানুষের যন্ত্রণা স্মরণ করার দিন, যারা দেশভাগের বিভীষিকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালের ১৪ অগস্ট কংগ্রেস ভারতকে বিভক্ত করে মা ভারতীর আত্মসম্মানে আঘাত করেছিল। সেই বিভাজন সৃষ্টি করেছিল হিংসা, নির্যাতন ও অমানবিকতার— যার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাঁদের ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁদের প্রতি আমার হৃদয় থেকে শ্রদ্ধার্ঘ্য রইল। জাতি এই ইতিহাস এবং যন্ত্রণাকে কখনও ভুলবে না।”

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এক্স-এ লেখেন, “দেশভাগের ফলে যে সব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি প্রতিটি ভারতীয়ের মনের মধ্যে আজও সহানুভূতি রয়ে গেছে। আমরা জাতীয় সম্প্রীতি আরও দৃঢ় করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” তিনি আরও বলেন, “আমি শ্রদ্ধা জানাই সেইসব ভাই ও বোনদের, যাঁরা ১৯৪৭ সালের বিভাজনের পর হিংসা ও ঘৃণার ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করেছিলেন এবং যাঁদের জীবন, সম্পত্তি সবকিছুই হারিয়ে গিয়েছিল।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও দেশভাগের মানবিক ও কূটনৈতিক প্রভাব তুলে ধরে লেখেন, “#PartitionHorrorsRemembranceDay-তে আমরা স্মরণ করছি সেইসব সাহসী মানুষদের, যারা এই ভয়াবহ ট্র্যাজেডি সহ্য করেছিলেন। দেশভাগ যে কতটা মানবিক যন্ত্রণার সৃষ্টি করেছিল এবং এর কূটনৈতিক ফলাফল কত গভীর ছিল, তা আজও আমরা উপলব্ধি করি। এই অধ্যায় আমাদের অনেক কিছু শেখায়।”

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হঠাৎ করে টানা সীমান্তরেখা টেনে দেওয়া, রাজনৈতিক অচলাবস্থা এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের তাড়াহুড়ো করে দেশ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত— এই সব কিছু মিলে জন্ম দেয় উপমহাদেশের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের। র‍্যাডক্লিফ কমিশনের অতি দ্রুত এবং ধর্মভিত্তিক সীমারেখা নির্ধারণের ফলে শুরু হয়েছিল ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ মানব অভিবাসন। প্রায় ১৪ থেকে ১৮ মিলিয়ন মানুষ সীমান্ত পার করেন— হিন্দু ও শিখরা ভারতে, মুসলিমরা পাকিস্তানে।

এই অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলার ফলে ছড়িয়ে পড়ে ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক হিংসা। ট্রেনভর্তি শরণার্থী হত্যাকাণ্ড, গ্রামের পর গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া, নারী নিগ্রহ, পরিবার ভাঙনের মতো বিভীষিকাময় চিত্র সেই সময় গোটা উপমহাদেশকে কাঁপিয়ে তোলে। সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১০ লক্ষেরও বেশি, যদিও বেসরকারি হিসাবে তা আরও অনেক বেশি হতে পারে।

এই ভয়াবহ অধ্যায়ের স্মৃতি ধরে রাখতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদী ১৪ অগস্টকে ‘বিভাজন বিভীষিকা স্মৃতি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেন। প্রতি বছর এই দিনে সারা দেশে প্রদর্শনী, নথিভিত্তিক প্রদর্শন, স্মৃতিচারণা, আলোচনাসভা ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেই অধ্যায় স্মরণ করা হয়। এর মূল বার্তা— হিংসা ও বিভাজনের পথ ত্যাগ করে দেশজুড়ে ঐক্য, সম্প্রীতি এবং মানবিকতার পথকে আরও মজবুত করা।

আজকের এই দিনে দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব দেশবাসীকে ইতিহাসের এই মর্মান্তিক অধ্যায় থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন প্রজন্মকে ঐক্য, সহানুভূতি ও সম্প্রীতির বার্তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, দেশভাগের যন্ত্রণা শুধু অতীত নয়— এটি আমাদের সামনে রাখে ভবিষ্যতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর কখনও না ঘটে।