নয়াদিল্লি, ১৪ আগস্ট: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের প্রতি অসন্তুষ্ট, কারণ ভারত তার ‘ম্যাক্সিমালিস্ট’ বাণিজ্যিক দাবিগুলি মানেনি এবং মার্কিন চাপের কাছে নতি স্বীকার করেনি। এমনটাই দাবি করেছেন প্রাক্তন কূটনীতিক ও লেখক বিকাশ স্বরূপ। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ভারত তার কৃষি ও দুগ্ধ শিল্পে মার্কিন প্রবেশাধিকারের বিরোধিতা করেছে এবং জেনেটিক্যালি মডিফায়েড ফসলের ক্ষেত্রেও মার্কিন স্বার্থ রক্ষা করতে অস্বীকার করেছে। ট্রাম্পের চাপের কৌশল ভারতকে রাজি করানোর চেষ্টা হলেও, দিল্লি আপস করেনি।
স্বরূপ জানান, ট্রাম্পের আরেকটি ক্ষোভ হল পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে তার তথাকথিত মধ্যস্থতার ভূমিকা ভারত স্বীকার করেনি। মে মাসে পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার জবাবে ভারত ‘অপারেশন সিন্ধুর’ চালায় এবং পাকিস্তানের ওপর প্রতিআক্রমণ করে। পরবর্তী যুদ্ধবিরতির জন্য ভারত সরাসরি পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছিল, কোনও তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই। তবে ট্রাম্প একাধিকবার দাবি করেছেন, তিনিই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত করেছেন এবং পারমাণবিক যুদ্ধ ঠেকিয়েছেন। পাকিস্তান এই ভূমিকা স্বীকার করেছে এবং ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীতও করেছে, কিন্তু ভারত তা করেনি।
স্বরূপ বলেন, ট্রাম্প ভারতকে ব্রিকস জোটে থাকার জন্যও ভালো চোখে দেখছেন না। তিনি মনে করেন, এই জোট আমেরিকাবিরোধী এবং ডলারের বিকল্প মুদ্রা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। ফলে ট্রাম্পের দৃষ্টিতে ভারতের অবস্থান সন্দেহজনক।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান বর্তমানে মার্কিন প্রশাসনের কাছাকাছি চলে এসেছে কারণ তারা কৌশলগতভাবে নিজেকে দক্ষিণ এশিয়ার ‘ক্রিপ্টো হাব’ হিসেবে তুলে ধরেছে। ট্রাম্পের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সিয়াল’-এর সঙ্গে পাকিস্তানের চুক্তি হয়েছে, যা ক্রিপ্টোকারেন্সি খাতে পারস্পরিক স্বার্থ তৈরি করেছে। এছাড়া, পাকিস্তান সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সাম্প্রতিক আমেরিকা সফর ও কথিত তেল রিজার্ভ নিয়ে কথাবার্তাও এই সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়।
স্বরূপ বলেন, “এই সম্পর্ক মূলত স্বল্পমেয়াদী এবং আর্থিক স্বার্থ দ্বারা চালিত। এর সঙ্গে ভারতের মতো কৌশলগত সম্পর্কের তুলনা হয় না। ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদী এবং কৌশলগত স্তরে প্রতিষ্ঠিত।”
ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক চাপিয়েছেন, যার একটি অংশ রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানিকে কেন্দ্র করে। তিনি আগেই ভারতকে ‘ট্যারিফ কিং ‘ বলে আক্রমণ করেছিলেন। তবে স্বরূপ পাল্টা বলেন, এখন আসল ‘ট্যারিফ কিং’ হল আমেরিকা নিজেই। ভারতের গড় শুল্ক ১৫.৯৮ শতাংশ, আর আমেরিকার ১৮.৪ শতাংশ। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই শুল্কনীতি শেষ পর্যন্ত আমেরিকারই ক্ষতি করবে—মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে, যার বোঝা পড়বে আমেরিকান জনগণের ওপর।
স্বরূপ আরও জানান, পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে জলের অধিকার সংক্রান্ত ‘সিন্ধু জলচুক্তি’ স্থগিত হওয়ায় উদ্বিগ্ন। ভারতের তরফ থেকে চুক্তি স্থগিতের ফলে পাকিস্তান প্রবল চাপের মুখে পড়েছে। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আন্তর্জাতিক মহলের নজর কাড়তে আবারও পরমাণু যুদ্ধের হুমকি দিচ্ছেন, যা তিনি ‘পারমাণবিক ব্ল্যাকমেল’ বলে আখ্যা দেন।
সবশেষে স্বরূপ বলেন, “এই পরিস্থিতি একটি সাময়িক ঝড়, কোনো স্থায়ী বিভাজন নয়। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি বরাবরই কৌশলগত স্বাধীনতার ওপর নির্ভরশীল। আমরা কোনো দেশের অনুসারী হতে পারি না, হবও না।”

