নয়াদিল্লি, ১৪ আগস্ট : অবশেষে বিহারে ৬৫ লক্ষ বাতিল ভোটারের নাম প্রকাশে সম্মত হয়েছে নির্বাচন কমিশন। সুপ্রিম কোর্টে আশ্বস্ত করেছে কমিশন। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে ওই প্রক্রিয়া সারতে হবে। সাথে আদালত আরও নির্দেশ দিয়েছে, বিশেষ নিবিড় সংশোধনের ফলে তালিকা থেকে বাদ পড়েছে এমন ভোটার আধার দেখিয়েই দাবি জানাতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, বিহারে বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়ায় খসড়া ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়া নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ জারি করেছে। আদালত জানিয়েছে, যেসব ভোটাররা তাঁদের নাম বাদ পড়া নিয়ে ক্ষুব্ধ, তাঁরা আধার কার্ডসহ নিজেদের দাবি জানাতে পারবেন। বিচারপতি সূর্যকান্ত ও জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে, নাম বাদ পড়া ভোটারদের তালিকা ও বাদ পড়ার কারণ সংবাদপত্র, রেডিও ও টিভির মাধ্যমে সর্বত্র প্রচার করতে হবে।
শীর্ষ আদালত নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্ন করেছে, আপনারা মৃত, অন্যত্র স্থানান্তরিত বা অন্য কেন্দ্রে চলে যাওয়া ভোটারদের নাম প্রকাশ্যে আনতে পারবেন না কেন? আদালত আরও বলেছে, এই নামগুলো ওয়েবসাইট বা নোটিস বোর্ডে দেওয়া যেতে পারে। ক্ষুব্ধ ভোটাররা ৩০ দিনের মধ্যে সংশোধনের আবেদন করতে পারবেন। আমরা চাই না জনগণ শুধু রাজনৈতিক দলের উপর নির্ভরশীল থাকুক।
নির্বাচন কমিশন আদালতকে জানিয়েছে, বিহারে বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়ায় প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। কমিশন সম্মত হয়েছে, বুথভিত্তিক সেই তালিকা প্রকাশ করা হবে। যাতে বাদ পড়ার কারণও স্পষ্ট থাকবে, যেমন মৃত্যু, স্থানান্তর, অথবা ডুপ্লিকেট রেজিস্ট্রেশন।
এই তালিকা প্রতিটি বুথ লেভেল অফিসারের অফিসে, ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিস ও পঞ্চায়েত অফিসে প্রদর্শন করতে হবে। জেলা নির্বাচন আধিকারিকদের অফিসেও তালিকা প্রকাশ করতে হবে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতেও তা শেয়ার করতে হবে। এই তালিকায় উল্লেখ থাকবে, যাঁরা ক্ষুব্ধ, তাঁরা আধার কার্ডের কপি সংযুক্ত করে তাদের নাম পুনঃস্থাপনের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন।
১ আগস্ট উপস্থাপিত ইসিআই তথ্য অনুসারে, ৬৫ লক্ষ বাদ দেওয়া তালিকার মধ্যে রয়েছে মৃত্যুর কারণে ২২.৩৪ লক্ষ, স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত বা অনুপস্থিত হিসাবে চিহ্নিত ৩৬.২৮ লক্ষ এবং একাধিক স্থানে ইতিমধ্যেই নথিভুক্ত হিসাবে তালিকাভুক্ত ৭.০১ লক্ষ।
রাষ্ট্রীয় জনতা দল, কংগ্রেস, এবং এনজিও অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস এই সংশোধন প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে আদালতের দ্বারস্থ হয়। ১৩ আগস্ট আদালত জানায়, ভোটার তালিকা কখনও “স্থির” থাকতে পারে না, সময়মতো তা সংশোধন হওয়া স্বাভাবিক। এছাড়া ৭টি থেকে ১১টি পরিচয়পত্র গ্রহণযোগ্য করাকে আদালত “ভোটার-বান্ধব পদক্ষেপ” বলেই ব্যাখ্যা করেছে, যা কোনোভাবেই “বর্জনমূলক” নয়।
সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনকে আগামী ২২ আগস্ট-এর মধ্যে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে। পরবর্তী শুনানি স্থগিত রাখা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে বিহারের লক্ষাধিক ভোটার যাদের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে, তারা এখন সরাসরি আবেদন জানিয়ে পুনর্বিবেচনার সুযোগ পাবেন।

