প্রি-প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগে প্রশিক্ষণ যোগ্যতা নিয়ে অনিশ্চয়তা, আবেদনকারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি

আগরতলা, ১২ আগস্ট: সম্প্রতি ২০২৫ সালে টিআরবিটি-এর মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য জারি হওয়া বিজ্ঞপ্তি রাজ্যের বহু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীকে বিভ্রান্ত করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত যোগ্যতার শর্তাবলী কাগজে-কলমে সঠিক হলেও মূল সমস্যাটি দেখা দিয়েছে প্রশিক্ষণের মেয়াদ নিয়ে। সরকারি শর্ত অনুযায়ী প্রার্থীকে অবশ্যই ইউজিসি ও এনসিটিই অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের প্রদত্ত দুই বছরের ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি টিচার ট্রেনিং কোর্সে উত্তীর্ণ হতে হবে। দুই বছরের কম সময়ের প্রশিক্ষণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে।

কিন্তু বাস্তবে ত্রিপুরা ও বহি:রাজ্যের বহু কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদিত বেসরকারি প্রশিক্ষণ কলেজে বর্তমানে এক বছরের ডিপ্লোমা ইন নার্সারি (ইসিসিই) কোর্স চালু রয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে যেই দুই বছরের কোর্সের কথা বলা হয়েছে, সেই ধরনের প্রশিক্ষণ রাজ্যের সরকারি বা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানেই বর্তমানে চালু নেই। টিআরবিটি – এই বিষয়টি অবগত যে প্রি-প্রাইমারি পর্যায়ে দুই বছরের প্রশিক্ষণ এখনো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি। এই অবস্থায় এক বছরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দপ্তরের অদক্ষতা ও পরিকল্পনার ঘাটতির কারণে তাঁদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। অথচ অতীতে ত্রিপুরায় এক বছরের প্রশিক্ষণ দিয়েই প্রি-প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগের নজির রয়েছে।

প্রশ্ন উঠছে, ত্রিপুরা এবং বহি:রাজ্যের সরকার অনুমোদিত কলেজ থেকে এক বছরের ডিপ্লোমা ইন নার্সারি বা ইসিসিই সম্পন্ন করা হাজারো ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ কী হবে? শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মতে, দপ্তরের সদিচ্ছা থাকলে এক বছরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদেরও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব। পরবর্তীতে ইন-সার্ভিস চলাকালীন ব্রিজ কোর্স যুক্ত করে দুই বছরের সমমানের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করানো যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সুযোগ না দিলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হাজার হাজার যুবক-যুবতী কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হবেন। একই সঙ্গে শিক্ষক সংকটও বাড়বে, যা রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

উল্লেখযোগ্য যে, ভারতে সরকারি পর্যায়ে প্রি-প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ খুবই সীমিত। অথচ বেসরকারি সিবিসিই -অনুমোদিত বিদ্যালয়গুলো বহু বছর ধরেই এক বছরের ডিপ্লোমা ইসিসিই দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ করছে এবং সফলভাবে পরিচালনা করছে। বর্তমানে অভিভাবক মহলেও প্রশ্ন উঠেছে—এই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নিয়োগ আদৌ কার্যকর হবে কিনা। কারণ শর্ত অনুযায়ী দুই বছরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীর সংখ্যা ত্রিপুরায় কার্যত নেই বললেই চলে।
ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, রাজ্যের প্রি-প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগে প্রশিক্ষণ যোগ্যতার এই বিতর্কের সমাধান সম্পূর্ণ নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছার ওপর। এক বছরের যোগ্যতা দিয়েও নিয়োগ করলে যেমন শিক্ষক সংকট মিটবে, তেমনি বহু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সরকারের ইতিবাচক সিদ্ধান্তই প্রমাণ করবে যে তারা শিক্ষার উন্নয়ন ও যুবসমাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সত্যিই আন্তরিক।