“আভি পিকচার বাকি হ্যায়”: ভোট কারচুপি অভিযোগের পর রাহুল গান্ধীর হুঁশিয়ারি বার্তা, নির্বাচন কমিশনের পাল্টা জবাব

নয়াদিল্লি, ১২ অগস্ট: কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী আবারও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কড়া অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর দাবি, কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রে ভোট কারচুপির মাধ্যমে বিজেপিকে জিতিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এবার বিহারেও একই পদ্ধতিতে ভোটার তালিকায় কারসাজি করে ভোটে হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা চলছে — এমনই অভিযোগ তুলেছেন তিনি।

মঙ্গলবার সংসদের বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাহুল বলেন,”একটা-দুটো নয়, অনেক আসনে এই কারচুপি হয়েছে। এটা জাতীয় স্তরে, পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সব জানে। আগে প্রমাণ ছিল না, এখন আছে। আমরা সংবিধান বাঁচানোর লড়াই করছি। নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব পালন করছে না। ‘ওয়ান পার্সন, ওয়ান ভোট’ নীতির অপমান করা হচ্ছে। আভি পিকচার বাকি হ্যায়।”

এই মন্তব্য রাহুল গান্ধী করেছেন একদিন আগে সংসদের বাইরে বিরোধীদের বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে। কংগ্রেস-সহ ভারত জোটের একাধিক দল নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরব হয়ে দাবি তোলে — স্ক্যান করা নয়, মেশিন-পঠনযোগ্য ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে যাতে ত্রুটি সহজেই ধরা যায়।

এই বিক্ষোভে রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, অখিলেশ যাদব, সঞ্জয় রাউতের মতো নেতাদের আটক করে দিল্লি পুলিশ। বাসে করে নিয়ে যাওয়ার সময় রাহুল বলেন, “এই লড়াই রাজনৈতিক নয়, এটা সংবিধান রক্ষার লড়াই।”

এর আগে, রাহুল গান্ধী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন,”সংবিধান আক্রমণ করার আগে দু’বার ভাবুন। আমরা একজন একজন করে আপনাদের ধরব। দশ বছর ধরে ভোটার তালিকা ও ভোট বুথের ভিডিও আমাদের দিন। লুকিয়ে লাভ নেই।”

তিনি একাধিক প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে দাবি করেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল কেন্দ্রে অন্তত ১.০২ লক্ষ ভুয়ো ভোট পড়েছে। একটি বাড়ির ঠিকানায় ৮০ জন ভোটার নিবন্ধিত থাকার মতো উদাহরণ দেন তিনি। ওই কেন্দ্রে বিজেপির পি সি মোহন কংগ্রেসের মন্সুর খানের থেকে ৩৩ হাজার ভোটে জেতেন।

একই রকম অভিযোগ ওঠে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও। অভিযোগ, লোকসভা ভোটে বিজেপি-জোটের হারার পর মাত্র চার মাসের মধ্যে এক কোটিরও বেশি নতুন ভোটার তালিকাভুক্ত হন।

এর পাশাপাশি, বিহারে ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ ঘিরেও ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিরোধীরা এই প্রক্রিয়াকে ভোটে কারচুপির প্রস্তুতি বলেই মনে করছে। বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।

নির্বাচন কমিশন রাহুলের এই অভিযোগগুলিকে তীব্র ভাষায় খণ্ডন করেছে। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে,”নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য। কারচুপির অভিযোগ ভিত্তিহীন। রাহুল গান্ধী যেন স্বাক্ষরিত হলফনামা দিয়ে প্রমাণ হাজির করেন।”

এছাড়া কমিশন ২০১৮ সালে কংগ্রেস নেতা কমলনাথের একটি মামলার প্রসঙ্গ তুলে দাবি করেছে, কংগ্রেস সুপ্রিম কোর্টকেও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল।

বিজেপির তীব্র সমালোচনা করে দলের আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য এক্স-এ লিখেছেন,”রাহুল গান্ধী যদি সত্যিই বিশ্বাসযোগ্য হন, তবে শপথপত্র দিয়ে প্রমাণ দিন কারা ভুয়ো ভোটার। তা না হলে স্পষ্ট হবে, তিনি শুধুই রাজনৈতিক নাটক করছেন।”

সামনে বিহার নির্বাচন, তার আগেই এই রাজনৈতিক চাপানউতোর চরমে উঠেছে। রাহুল গান্ধীর ‘আভি পিকচার বাকি হ্যায়’ মন্তব্যে জল্পনা আরও গাঢ় হয়েছে — এবার তিনি ঠিক কী তথ্য সামনে আনতে চলেছেন?