ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন অংশ, জলাবদ্ধতা, যানজট ও স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা

নয়াদিল্লি, ৯ আগস্ট: রাজধানী দিল্লিতে শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া একটানা ভারী বর্ষণে শনিবার সকালেই শহরের একাধিক অঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ভাসন্ত কুঞ্জ, আর কে পুরাম, কনট প্লেস ও মিন্টো ব্রিজ-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় প্রবল বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাটে জল জমে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে। পাঞ্চকুইয়ান মার্গ, মথুরা রোড, শাস্ত্রী ভবন, মতি বাগ, ও কিদ্বাই নগরের মতো এলাকাগুলিতে যান চলাচল প্রায় স্তব্ধ হয়ে যায়। দিল্লির সাফদরজং আবহাওয়া কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টায় ৭৮.৭ মিমি, প্রগতি ময়দান ১০০ মিমি, লোধি রোড ৮০ মিমি, পুসা ৬৯ মিমি এবং পালাম ৩১.৮ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। সকালবেলায় শহরের তাপমাত্রা ছিল ২৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রির আশেপাশে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রথমে দিল্লির জন্য ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর লাল সতর্কতা জারি করলেও পরে তা হলুদ সতর্কতায় নামিয়ে আনা হয়। সতর্কবার্তায় জানানো হয়েছে, ১২ আগস্ট পর্যন্ত বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। শুধু দিল্লি নয়, দেশের অন্যান্য অংশেও মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তায় একই ধরনের দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল প্রদেশে পূর্ব কামেঙ্গ, কুরুং কুমে, পাপুমপারে, নিম্ন সাবানসিরি, লোহিত ও লংডিং জেলায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। কিছু অঞ্চলে ১২–২০ সেমি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলস্বরূপ, ভূমিধস, আকস্মিক বন্যা, গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ হওয়া, এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাটের আশঙ্কা রয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে ফসল নষ্ট হওয়া, বীজ ধুয়ে যাওয়া, মাটির ক্ষয় এবং জলাবদ্ধতার কারণে চাষের ক্ষতি হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

হায়দরাবাদ শহরে শনিবার সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ ও মাঝারি বৃষ্টিপাত দেখা গেছে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চারমিনার, খাইরতাবাদ, কুকাটপল্লি, এলবি নগর, সেকেন্দ্রাবাদ ও সেরিলিংগামপল্লি জেলায় ৩০ থেকে ৪০ কিমি বেগে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিপাত চলবে। শহরের একাধিক অঞ্চলে জলাবদ্ধতা, ড্রেনেজ ব্লকেজ ও যানজট দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তেলেঙ্গানা রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর নাগরিকদের মৌসুমি রোগ যেমন ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, জ্বর, টাইফয়েড ও ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে। ঘর ও আশেপাশে মশার জন্ম রোধ, জল ফুটিয়ে খাওয়া, হাত ধোয়া ও “ড্রাই ডে” পালনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে উত্তরপ্রদেশের লখনউ, সীতাপুর সহ একাধিক জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হলেও আবহাওয়া মনোরম রয়েছে। তবে আবহাওয়া দপ্তর রাজ্যের ৩০টির বেশি জেলায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা দিয়েছে, এর মধ্যে লক্ষীমপুর খেরি, আগ্রা, মথুরা, বেয়ারেলি ও মহোবা উল্লেখযোগ্য। বিহারেও আগামী সাত দিন পশ্চিম চম্পারণ, গোপালগঞ্জ, সিওয়ান, ও ভোজপুরে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী, রুদ্রপ্রয়াগ, চমোলি ও নৈনিতালে হলুদ সতর্কতা এবং রোববারের জন্য কমলা সতর্কতা জারি হয়েছে, যা আবহাওয়ার আরও অবনতির ইঙ্গিত দেয়।

দেশের বিভিন্ন শহরে আবহাওয়া ভিন্ন হলেও বর্ষার প্রভাব স্পষ্ট। দিল্লিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ২৫ ডিগ্রি, মুম্বাইতে তাপমাত্রা থাকবে ৩০ থেকে ২৬ ডিগ্রির মধ্যে। কলকাতায় ৩৩ থেকে ২৪ ডিগ্রি এবং চেন্নাইয়ে ৩৪ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করবে। পাহাড়ি অঞ্চল নৈনিতালে তাপমাত্রা থাকবে ২১ থেকে ১৬ ডিগ্রির মধ্যে, যা যথেষ্ট মনোরম। বর্ষার ফলে দেশের কিছু অঞ্চলে স্বস্তি এলেও অন্য অংশে তা দুর্যোগ ডেকে এনেছে। আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কতা অনুসারে নাগরিকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন নিরাপদ স্থানে থাকেন এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হন। প্রশাসনও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে।